লকডাউনের দ্বিতীয় দিন
খোলেনি দোকানপাট ফাঁকা রাস্তাঘাট
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৯:৪৮ পিএম, ২৬ মে ২০২১ বুধবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিনের চলমান লকডাউনের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও শহর ও গ্রামাঞ্চলের জনবহুল এলাকা ছিল জনমানবশূন্য। প্রশাসনের তৎপরতায় ব্যস্ততম সড়ক ও অভ্যান্তরিন রাস্তায়ও ছিল ফাঁকা। সরকারি নির্দেশনায় সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবন্দি রেখেছে৷ একইসঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন কঠোর থাকায় সফল হয়েছে লকডাউন৷
জানা গেছে, গতবছর লকডাউনের সুফল মিলেছিল৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে দ্বিতীয় দফায় সচেতনতার অভাবে ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার৷ পুরো জেলার একই চিত্র৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন এক সপ্তাহে লকডাউন ঘোষনা করেন৷ বুধবার ছিলো লকডাউনের দ্বিতীয় দিন৷
বুধবার জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনের মতো লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও রাস্তাঘাট ফাঁকা রয়েছে। খোলেনি বাজার ও দোকানপাট ৷ ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া, বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান৷ রাস্তায় নামেনি গণপরিবহণ৷ জেলার বাইরে থেকে কোনো যানবহন ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না এবং চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। পাশের জেলা নওগাঁ ও রাজশাহীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপি কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেই নির্দেশনা অমান্য করে কিছুটা উদাসীনতা, কিছুটা রুজি রোজগারের তাগিদে রাস্তাঘাটে মানুষ মাস্ক না পরে ঘুরছিলেন৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যেখানে-সেখানে চলছিল আড্ডা৷ স্বাস্থ্যবিধি ভুলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শত শত মানুষ ঠেলাঠেলি করে ঈদের কেনাকাটা করেছেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি৷ এর ফলে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ছাড়া পথ ছিল না জেলা প্রশাসনের। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুদিন মানুষ নিজেদের স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি রেখেছে৷ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে কাউকে দেখা যায়নি। তবে অকারনে কেউ কেউ লকডাউন দেখতে রাস্তায় বের হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
তথ্যমতে, এই সাফল্যের প্রধান কারণ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কঠোর মনোভাব৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সব উপজেলায় পুলিশ অত্যন্ত সক্রিয় ছিল৷ লকডাউন সফল করতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি আটকিয়ে দিনভর চলেছে জিজ্ঞাসাবাদ। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও মাঠে নেমেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২টি দল জেলার ৫ উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করা হচ্ছে জরিমানা। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৫০ টাকা।
এছাড়াও কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে জেলা পুলিশ। জেলা শহরের ২৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহল দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে কাজ করছে পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রবেশ বা চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে নওগাঁ জেলার সংযোগস্থল গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডাবাজার ও রাজশাহীর সঙ্গে সংযোগস্থল দারিয়াপুরে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কাউকে ঢুকতে বা জেলা থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তিমোড়ে লকডাউনে বাস্তবায়নের দ্বায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনায় লকডাউন বাস্তবায়নে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি৷ সাধারণ মানুষও চাইছে লকডাউন সফল করতে৷ জনসমর্থনের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কিছুটা সহজ হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও মানুষকে ঘরে রাখতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। সরকারি নির্দেশনায় সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবন্দি রাখায় সফল হয়েছে লকডাউন৷ সকলের সহযোগিতা পেলে করোনা মহামারীর এই সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
আরকে//