ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

এমজেএন’র প্রতিবেদন

কুয়াকাটায় বাইকচাপায় প্রতিদিন প্রাণ হারায় ৬ হাজার কাঁকড়া

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৪:৪২ পিএম, ২৭ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:২১ পিএম, ২৭ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার

পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে চলা বাইকের চাপায় প্রতিদিন অন্তত ৬ হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের প্রভাবে প্লাস্টিক দূষণ ও পশুপাখি বিলীন হয়ে সৈকতটি তার সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে বলে উঠে এসেছে সমুদ্র পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।

দুপুরে সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ সোহেলের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় প্রতিবেদনটি পাঠ করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কেফায়েত শাকিল।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০-৬০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে। কিন্তু এদের ম্যানেজমেন্টের জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে প্রতিদিন এই সৈকতে পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকের ৯০ শতাংশই চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। এর কারণে সমুদ্রের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়া, জীব-বৈচিত্র্যে সবচেয়ে বড় বিরূপ প্রভাব পড়ছে সৈকতে পর্যটক বহন করে চলা মোটরবাইকের কারণে।

এতে পরিসংখ্যান দেখিয়ে তুলে ধরা হয়, পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটায় প্রতিদিন অন্তত ২০০টি মোটরসাইকেল চলে। যার প্রতিটির দৈনিক আয় ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব মোটরসাইকেল দিনে অন্তত ২ থেকে ৩ বার সৈকত হয়ে কাঁকড়ার দ্বীপে যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় প্রতিবার একটি মোটরসাইকেলের চাপায় অন্তত ১০টি করে কাঁকড়ার মৃত্যু হয়। যা মোট হিসেব করলে অন্তত ৬ হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হয়।

এছাড়া কুয়াকাটায় বন ধ্বংস, বেদখল, ভাঙনে বসতি হারানো ও মৎস্য সম্পদের হুমকির তথ্যও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

কুয়াকাটায় অনিয়ন্ত্রিত পর্যাটন বন্ধ এবং পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। তাহলো- সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সৈকত এলাকায় প্লাস্টিক মোড়কজাত পণ্য নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা টঙ দোকান উচ্ছেদ করে সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা,আবর্জনা পরিষ্কার, বিচে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যটকদের সচেতন করতে একটি বিশেষ বাহিনী নিয়োগ করা,পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকায় মোটরবাইক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, সৈকত এলাকায় উচ্চস্বরে বাদ্য বাজানো বন্ধ করা, লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে পর্যটক নিয়ন্ত্রণসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা- আইইউসিএন’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন, ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাহাঙ্গীর আলম, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান প্রমুখ।

আরকে//