বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুব্ধ ঘরবন্দি মানুষ
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ২৯ মে ২০২১ শনিবার | আপডেট: ১০:১২ পিএম, ৩০ মে ২০২১ রবিবার
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। সরকারি নির্দেশনায় ঘরবন্দি মানুষ বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজিতে চরমে দুর্ভোগে পড়েছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভ্রাট চাঁপাইনবাবগঞ্জের দীর্ঘদিনের পরিচিত সমস্যা। তবে গত কয়েকদিন ধরে এ সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ যেন আসা-যাওয়ার খেলা। সামান্য বৃষ্টি কিংবা ঝড় হলেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর ভারি বৃষ্টি হলে তো বিদ্যুতের অপেক্ষায় কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেনÑ সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ থাকে না। নিরাপত্তার স্বার্থে ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। মূলত, ওভারহেড সঞ্চালন লাইনের জন্য সিস্টেমস লস হয়।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শনিবার সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিপুর পাওয়ার গ্রিড সংস্কারের জন্য এ নোটিশ দেয় নেসকো। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসাপাতলের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা ব্যহত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এদিকে কোন নোটিশ ছাড়াই শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। করোনায় ঘরবন্দি মানুষ অসহ্য যন্ত্রণায় সময় পার করেছেন। রোববার সকাল থেকেও বিদ্যুৎতের আসা-যাওয়ার খেলা চলছেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও পৌর মেয়রের অনুরোধে সংস্কার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। যে কোন দিন সুবিধাজনক সময়ে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে। আর গত দুদিন থেকে বিদ্যুতের যে সমস্যা হচ্ছে সেটিÑ হরিপুর পাওয়ার গ্রিড থেকে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুব্ধ শহরের বাসিন্দারা জানান, একদিকে করোনায় ঘরবন্দি অন্যদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তারা। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎহীন কয়েক ঘণ্টা তাদের কষ্টে কেটেছে। তারা বলছেনÑ এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি কষ্ট পেয়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পাঠানপাড়ার বাসিন্দা সোহরাব আলী বলেন, হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়ে গেছে। গভীর রাতেও হচ্ছে লোডশেডিং। একদিকে দুঃসহ গরম অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা, জীবনটা একেবারে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিং হওয়ার কারণ হচ্ছে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ত্রুটি। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেলেও পুরনো সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন সেই লোড নিতে পারছে না। এ কারণে প্রায়ই লাইনে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তবে এ মৌসুমে বৃষ্টি এবং ঝড়ের কারণে লাইনে সমস্যা তৈরি হয়। এ কারণে বিভিন্ন জায়গায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে নেসকো দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার হরিপুর পাওয়ার গ্রিড সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তবে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও পৌর মেয়রের অনুরোধে সংস্কার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। পাওয়ার গ্রিডে সমস্যার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ঢাকা থেকে।
আরকে//