৬ দফা দাবি যেভাবে পরিণত হয় ১ দফায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৩৬ পিএম, ৫ জুন ২০২১ শনিবার
আজ যে মাটিতে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে এর বীজ বপন হয়েছিল ৬ দফা দাবির মাধ্যমে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাতে ক্ষমতায় বসতে না পারেন এবং ৬ দফা যাতে বাস্তবায়িত না হয় এ জন্য সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদ সভা স্থগিত ঘোষণা করেন। তখন এর প্রতিবাদে বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল এবং ৬ দফা পরিণত হয়েছিল স্বাধীনতার ১ দফা দাবিতে।
মামলা-গ্রেফতার দিয়ে নাজেহাল এবং হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দমানো সম্ভব হলো না। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরের সর্বদলীয় কনফারেন্সের সাবজেক্ট কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবিনামা উত্থাপন করেন।
এই দাবিনামায় তিনি ফেডারেটিভ রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া সব বিষয় প্রাদেশিক সরকারের কাছে থাকার দাবি পেশ করেন।
পরবর্তীতে ১৮-২০ মার্চ ১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে ৬-দফা অনুমোদিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘আমাদের দাবি ৬-দফা’ পুস্তকাটি প্রচার করা হয়।
৬-দফা দাবি আওয়ামী লীগ সম্মেলনে অনুমোদিত হওয়ার পর সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০ মার্চ থেকে ৮ মে ১৯৬৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা ও মহকুমায় সফর করেন।
এই সময়ে প্রতিনিয়ত তিনি একদিকে গ্রেফতার হতে থাকেন, অন্যদিকে জামিনে ছাড়াও পান। শেষ পর্যন্ত ৮ মে ১৯৬৬ সালের গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা জেল থেকে মুক্তি দিয়ে আবার জেল ফটক থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়। পরবর্তীতে সরকার তাকে ১ নম্বর আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করে।
১৯ জুন আগরতলা মামলার শুনানি শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে লিখিত জবানবন্দি পাঠ করেন, তা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন। সুদীর্ঘ আট মাস, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত এই মামলার শুনানি ও জেরার কাজ চলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জবানবন্দি, শুনানি ও জেরার বিবরণী প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় উঠতে থাকলে ক্ষুব্ধ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। পরবর্তীতে পূর্ব বাংলায় যে গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়, তার পেছনে ছিল ৬-দফা ও আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবি।
১৯৬৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব এক গণ-অভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহূত গণসংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে ৬-দফা ও ১১-দফার পক্ষে নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর পাকিস্তানি শাসক-শোষক গোষ্ঠী এমনভাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে যাতে কোনোভাবেই যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় বসতে এবং ৬-দফা ও ১১-দফা বাস্তবায়িত না করতে পারেন।
১ মার্চ ১৯৭১ সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদ সভা স্থগিত ঘোষণা করেন। বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৬-দফা পরিণত হয় স্বাধীনতার ১-দফা দাবিতে।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
(ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
এএইচ/