করোনায় ইউপি নির্বাচন চায় না মোংলাবাসী
আবুল হাসান, মোংলা
প্রকাশিত : ১০:২৯ এএম, ৬ জুন ২০২১ রবিবার
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে মোংলায় চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দ্বিতীয়বারের মতো আরও সাত দিনের বিধি নিষেধ জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগামী ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণায় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোটাররা।
তারা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হলে মহামারীর সংক্রমণ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যাবে। সাধারণ ভোটারদের সাথে একমত প্রকাশ করে এই সময়ে নির্বাচন করতে নারাজ উপজেলা প্রশাসনও।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, “মোংলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ হ্রাস করতে আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছি। এর মধ্যে একটা নির্বাচন হলে সেটি হবে খুবই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি।”
আর এই আশঙ্কার কথাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। মহামারীর মধ্যে নির্বাচন যাতে না করা হয়, সে ব্যাপারে খুব শিগগিরই এর একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার।
ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোংলা বন্দর উপজেলা। একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বসবাস প্রায় দুই লাখ মানুষের। ঘনবসতিপূর্ণ এ উপজেলায় ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলাটি এখন করোনা হটস্পটে পরিণত। পরীক্ষণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখানে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আগামী ২১ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মজিদ, মোঃ খোকন ও আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধি নিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন! এটতো মরণ ডেকে আনা।
উপজেলার আরেক ইউনিয়ন চিলার বাসিন্দা কুলসুম বেগম ও জাহানারা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে কিভাবে নির্বাচন হয়? এতে তো করোনা আরও বেশি ছড়াবে’। এই সময়ে নির্বাচনের দরকার নেই বলেও জানান তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচন হচ্ছে একটা উৎসব। এই নির্বাচনে চায়ের দোকানে, মাঠে ঘাটে সবাই গায়ে গায়ে মিশে একাকার হয়ে যাবে।
করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে মোংলায় নির্বাচন দেয়া হলে, যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে তা মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের খবরে কিছুটা প্রচার প্রচারণার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রার্থীরা। যে কারণে ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়।
এমন তথ্য জানিয়ে মোংলার ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত রাখতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তিনি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন।
এদিকে, মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ইতোমধ্যেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। তাই এখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইউনিয়ন ছয়টিতে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৪০ জন।
এনএস/