ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

‘কাজের জন্য কারও শয্যাসঙ্গিনী হতে পারব না’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৪ পিএম, ৬ জুন ২০২১ রবিবার

পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়

পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়

গত ৪ জুন ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘পাপ’-এর দ্বিতীয় সিজন। তবে ইতিমধ্যেই কলকাতা ছেড়ে আরব সাগরের তীরে মায়া নগরীতে ফিরে গেছেন অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মার্চে এই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিংয়ের জন্য পুত্র কৃশিবকে নিয়ে দীর্ঘদিন পর নিজ শহরে ফিরেছিলেন তিনি। এসময়, কাজের জন্য কারও শয্যাসঙ্গিনী হতে রাজি নন বলেই জানান তিনি। 

মা হওয়ার পর প্রথম কাজ। কেমন ছিল মহামারিতে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা? কতটা বদলেছে টলিউড? এসব বিষয় নিয়েই সম্প্রতি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন এই অভিনেত্রী। অভিনেত্রী থেকে মা- জীবনের এই নতুন অধ্যায় নিয়ে পূজা জানান, আমি আগাগোড়াই নিজের সংসার চেয়েছিলাম, সন্তান চেয়েছিলাম। দুটোই পেয়েছি। ঈশ্বরের থেকে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। অক্টোবর মাসে কৃশিব আসার পর থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। জীবনে আর কিছু চাই না। অনেকেই বলে, অভিনেত্রীদের মা হতে নেই, চেহারা নষ্ট হয়ে যায়। আমি এগুলো কখনওই বিশ্বাস করি না।

টলিউডের সমসাময়িক অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই এখন সক্রিয় রাজনীতিবিদ। এ বিষয়ে পূজা বলেন, হ্যাঁ, এই দুঃসময়ে ওদের মানুষের পাশে থাকতে দেখে খুব ভাল লাগছে। কিছুদিন আগেই আমার এক বন্ধুর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সাহায্যের জন্য কিন্তু সবার আগে দেবের কথাই আমার মাথায় এসেছিল। ওকে ফোন করতেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। যত রকম চেষ্টা করা যায়, সব কিছু করেছে। ‘চ্যালেঞ্জ ২’-এর সময় তৈরি হওয়া সেই বন্ধুত্ব এখনও রয়ে গেছে।

নায়কদের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকলেও সমসাময়িক নায়িকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নেই পূজার। তিনি বলেন, নায়িকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগই পাইনি কখনও। তবে প্রত্যেককেই আমার খুব ভাল লাগে। আমার যে বন্ধুর মায়ের কথা বললাম, তাঁর জন্য অঙ্কুশ এবং ঐন্দ্রিলাও খুব সাহায্য করেছে আমাকে। একবার সারা রাত আমার সঙ্গে জেগেছিল ঐন্দ্রিলা। বারবার আমার বন্ধুর মায়ের খোঁজ নিচ্ছিল। ওর এই আন্তরিকতা আমার খুব ভাল লেগেছে।

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে সাফল্যের পরেও বাণিজ্যিক ছবির বাইরে তেমন একটা দেখা যায় না এই অভিনেত্রীকে। এ প্রসঙ্গে পূজা বলেন, বিশ্বাস করুন, এই বিষয়টা আমাকেও খুব ভাবায়। চেষ্টা করিনি, তেমন কিন্তু নয়। একটু অন্যরকম ছবি করার আশা নিয়ে একাধিকবার অডিশন দিতে গিয়েছি। বহুবার বলা হয়েছে, আমাকে বেশি সুন্দর দেখতে বলে ওই ধরনের ছবিতে আমায় মানাবে না। আচ্ছা, এ রকম দেখতে হওয়াটা কি আমার দোষ? আমি যে অভিনয় করতে পারি, সেটা প্রমাণ করার সুযোগটুকুই দেওয়া হয়নি। মাঝে মধ্যে মনে হয় ‘চ্যালেঞ্জ-২’-তে কী করেছি! শুধু সুন্দর সাজগোজ করে ছবির একটা অংশ হয়েছিলাম।

একজন অভিনেত্রী হিসেবে খোলামেলা দৃশ্যে স্বচ্ছন্দবোধ না করলেও আপত্তি নেই বলেই জানান পূজা। তিনি বলেন, আমি নিজে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দবোধ করি না। কিন্তু আমি মনে করি, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয়ে আপত্তি থাকা উচিত নয়। কিন্তু জোর করে যদি সাহসী দৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করা হয়, সেটা আমার চোখে ভুল। আমি এক সময় পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। মানুষজন রাস্তাঘাটে আমাকে দেখে প্রণাম করেছে। আবার বাংলা ছবিতে আইটেম গানেও আমি নেচেছি। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে আমার খোলামেলা দৃশ্যের খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আর মনে হয় না।

তবে নিজের কাস্টিং কাউচের অভিজ্ঞতা হয়েছে জানিয়ে পূজা বলেন, টলিউডে নয়, বলিউড এবং দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু আমি কখনওই কোনও অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় দিইনি। ভালো কাজ করার জন্য কারও শয্যাসঙ্গিনী হতে পারব না। এমন অনেককেই চিনি যাঁরা কাজ পাওয়ার আশায় ভুল পথে হেঁটেছেন। কিন্তু শেষমেশ কাজ না পেয়ে ‘মিটু’ অভিযোগ এনেছেন। মেয়েরা মুখ বুজে অন্যায় মেনে নেয় বলেই এই ধরনের শোষণ করার সাহস পায় কিছু মানুষ। প্রতিবাদ করতে শুরু করলেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলাবে।

আর এজন্য কাজ হাতছাড়া হওয়ার কোনও আফসোস নেই উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, আমি কখনওই প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই। আমি যা পেয়েছি, তা নিয়েই খুব খুশি। আর কৃশিবকে পাওয়ার পর জীবনের সব চাওয়াই পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হয়। তাই পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব করতে যাই না আর। সূত্র- আনন্দবাজার।

এনএস/