ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিতে ঠাকুরগাঁও 

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি   

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ৯ জুন ২০২১ বুধবার

ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতিদিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক বছরের মধ্যে একদিনে মঙ্গলবার জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন ৩০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার জানান, মঙ্গলবার রাতে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় একদিনে  ১০৬টি নমুনা পরীক্ষার পর নতুন করে ৩০ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ (পিসিআর টেস্ট), সিডিসি (জিন এক্সপার্ট টেস্ট), ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা হাসপাতালগুলো (এন্টিজেন টেস্ট) থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ১২ জন, বালিয়াডাঙ্গী ৬ জন, রানীশংকৈল ৭ জন, হরিপুর ২ জন এবং পীরগঞ্জ ৩ জন। মোট করা হয়েছে। আক্রান্তের হার ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া মঙ্গলবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৮০ বছর বয়সী একজন করোনা সংক্রমিত এক রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসাপাতালে মারা যান।

সিভিল সার্জন আরও জানান, এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় সর্বমোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৮১২ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ৫৮৫ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং মারা গেছে মোট ৪১ জন। তবে জেলায় এখনো রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরন পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ভারত থেকে যারা আসছেন তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেলে শুধু তাদেরই নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে ভারতীয় ধরন আছে কিনা তা জানার জন্য। তবু শঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই।

এ ব্যাপারে জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, করোনা মোকাবিলায় ঠাকুরগাঁওয়ে সক্ষমতা বাড়লেও এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে। রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেলে সমস্যায় পড়বে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালের করোনা ইউনিট ঢেলে সাজালেও এখানে নেই আইসিইউ ব্যবস্থা। এই ইউনিটে ভেন্টিলেটর থাকলেও দক্ষ জনবল নেই। ফলে করোনা ইউনিট অবহেলায় পড়ে রয়েছে। একটি অক্সিজেন প্ল্যান স্থাপন হলেও ৫ মাসেও চালু হয়নি এটি। এদিকে করোনার ভারতীয় ধরণ ঠেকাতে জেলার সীমান্ত সিলড করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

বিজিবির ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মাকসুদ জানান, সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। টহল আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন ঠেকাতে সীমান্ত সিল করা হয়েছে। প্রশাসনও সব ক্ষেত্রে তৎপর রয়েছে। করোনা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মাস্ক না পড়লে করা হচ্ছে জরিমানা।  ঘরে থাকতে উৎসাহিত করতে শুরু হয়েছে মাইকিং প্রচার প্রচারণা।
সদর হাসপাতালে অক্সিজেনের মাল্টি সিলিন্ডার সিস্টেম আছে। ৫ মাস আগে ঘটা করে লিকুইড (তরল) অক্সিজেন প্লান স্থাপন করা হয়েছে। তবে আজো এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে জুন মাসের মধ্যে এটি চালু হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, একটি অক্সিজেন প্ল্যান চালু রয়েছে। অক্সিজেনের সরবরাহে যাতে ঘাটতি না হয় সেজন্য আরো একটি অক্সিজেন প্লান স্থাপন করা হয়েছে। এটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব শীঘ্রই চালু হবে এই দ্বিতীয় অক্সিজেন প্লান। এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয়ঔষুধ হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু রেমডিসিভির ইনজেকশন কিনতে হচ্ছে রোগীদের।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের  তত্ত্বাবধায়ক  ডা. নাদিরুল আজিজ চপল বলেন, হাসপাতালে এই মুহূর্তে আইসিইউ থাকাটা অপরিহার্য। সদর হাসপাতালে ভেন্টিলেটর আছে, কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে চালু করা যায়নি। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরণ জেলায় মহামারী আকারে বিস্তার ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হবে। সমস্যায় পড়তে হবে বলে স্বীকার করেন তিনি। 

সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সেও আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, আগের তুলনায় আমাদের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এখন সদর হাসপাতালে, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে ও সকল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষা করে গত জানুয়ারিতে ৭%, ফেব্র“য়ারিতে ৪.৩৭ %, মার্চে ১৫.০৭ %, এপ্রিলে ১৪.০৮ % ও মে মাসে ১৩% রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আরকে//