ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার ছিল দেশকে পেছনে নেওয়ার অপচেষ্টা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৫ পিএম, ১২ জুন ২০২১ শনিবার | আপডেট: ০৪:৫২ পিএম, ১৬ জুন ২০২১ বুধবার

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১১ জুন) রাতে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঞ্চালনা‘গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিগত তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি। তিনি মুক্তি পেয়ে দেশর হাল ধরেছেন। 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের ৭৩তম এই আলোচনা পর্বে অংশ নেন - বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার-এর পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, ইউজিসি-র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও সাংবাদিক আলী হাবিব।

সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১১ই জুন, ২০০৮ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। সেই করাগারের যাওয়ার প্রেক্ষাপট, কারাগারে যাওয়ার কারণ, উদ্দেশ্য ও রাজনৈতিক নিপীড়নের যে শিকার তিনি হয়েছিলেন, সেসব নিয়ে আলোচনা করবেন সম্মানিত আলোচকবৃন্দ।

আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, যে ১/১১ সরকার যখন আমাদের ঘাড়ে চেপে বসলো, গণতন্ত্রকে হত্যা করবার জন্যে এবং রাজনীতিকে কলুষিত করবার জন্য, নিষিদ্ধ করবার জন্য- তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো এবং অদ্ভুত, অবাস্তব মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়। মাইনাস টু ফর্মূলার কথা বলা হয়, আসলে করছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মূলা- শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ ও রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া।

সূচনা বক্তব্যে সম্প্রীতি সংলাপের সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল বলেন, আজকের আমাদের সংলাপের শিরোনাম হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস’। আমরা এবং বাংলাদেশ আজকের দিনটিকে সেভাবেই দেখি। আমার কাছে এই দিনটি ১৫ আগস্টের চেয়ে কোনো অংশের চেয়ে কম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে দিনটিতে মিথ্যা অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছিল, সেদিনটি আমার কাছে ১৫ আগস্টের মতোই গুরুত্ববহ। ১৫ আগস্ট বড় প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে এসে দেশটির যখন হাল ধরেছিলেন, সেই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন সর্বশেষ প্রয়াস। 

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে যদি রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত করা যায় তাহলে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে একটা ভাগাড়ে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। আমরা ২১শে আগস্ট দেখেছি হয়তো ২০০৮ সালের বৈশ্বিক বাস্তবতায় ১৫ আগস্ট ও ২১ আগষ্টের মতো ঘটনা সংঘঠিত করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এটি নেত্রীর উপর, বাংলাদেশের উপর বড় আঘাত ছিল এবং আজকে সত্যি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি পেয়েছিল। শেখ হাসিনার মুক্তির পরের ঘটনা প্রবাহ সবার সামনে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং একের পর এক গৌরবমালা বাংলাদেশের বিজয়াঙ্গনে যুক্ত হচ্ছে।

লন্ডন থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, অনেকেই কারাগার থেকে মুক্ত হয়- বঙ্গবন্ধুও হয়েছেন কয়েকবার। উনি যখন শেষবার কারাগার থেকে মুক্ত হন তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমেদ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু বহুবার জেল থেকে বেরিয়েছিলেন কিন্তু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বের হওয়াটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে মহাত্মম ও নিঃসগমন। তা শুধু বাংলাদেশকেই স্বাধীন করার পথ উন্মুক্ত করেনি, পাকিস্তানেও দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল।’ এটা পাকিস্তানীরাও স্বীকার করে। ঠিক তেমনি ১১ জুন তারিখে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাও একদিন মুক্তিলাভ করেছিলেন কিন্তু এই মুক্তিলাভটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তি একসঙ্গে তিনটি ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছে। একটা ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার শাসনকে ফিরিয়ে আনা, দুই নম্বর ছিল খালেদা জিয়া যখন নেত্রী হিসেবে ব্যর্থ, দল ব্যর্থ এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমাদের উদীয়মান, বিত্তশালীদের কাছে, এলিটদের কাছে, সুশীল সমাজের কাছে, এমনকি সেনাবাহিনীর কাছে এটা প্রমাণ হয় যে খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশটা এগুবে না। সেজন্যই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকী রইলেন শেখ হাসিনা, তারা জানতেন শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম, ছোটকাল থেকে রাজনীতি করেছেন এবং তিনি দেশ চালাতে পারবেন। তাকে সরাতে হলে অন্য ফর্মুলা দরকার। সেজন্য আসে মাইনাস টু ফর্মুলা, যেটাকে আমি বলি ইউনুস-কামাল ফর্মুলা। তৃতীয় যেটা ছিল, সেটা আরও কঠোর। জেনারেল মইন সাহেব একটা দল গঠন করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জেনারেল মইন প্রেসিডেন্ট হবেন এবং একজন সিভিলিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী করে আধা-সামরিক সরকার গঠন। এই তিনটা ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা মুক্তিলাভের পরে ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনাকে ইচ্ছা করেই মুক্তি দেওয়া হয়নি, দেশের পরিস্থিতি এমনভাবে ঘুরে গেল যে শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ উদ্ধার করার কেউ ছিল না। এমনকি সামরিক বাহিনীও বুঝতে পেরেছিল, তারাও ক্ষমতা নিয়ে আর এগুতে পারবে না। প্ল্যানটা ছিল এ রকমই। আমার বিশ্লেষণ কতটা খাটি, কতটা মেকি বলতে পারবো না। 

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব ব্যর্থ হয় তারা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে সামনে খাড়া করে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেও কোনো কিছু সামলাতে পারলো না তখন বিএনপি চেয়েছিল একটা রক্তপাত। আর্মির একদল ক্ষমতালিপ্সুরা চেয়েছিল খালেদাকে বাদ দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি করা যাতে লোকরা মনে করে তারাই এখন দেশের একমাত্র ইস্যু। এর ফাঁকে ড. ইউনুস-ড. কামালের গুড গর্ভানেসের নামে সুশীল সমাজের একটা দল গঠন করার কথা ছিল। ড. ইউনুস সাহেব প্রধানমন্ত্রী, কামাল সাহেব প্রেসিডেন্ট- এই ধরনের একটা ফর্মুলা তারা তৈরি করেছিল। নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে সরানো যাবে না মনে করে ১/১১ সরকারটা তারাই এনেছিলেন। আমি এটাকে মিলিটারি ক্যু বলি না, এটাকে সিভিল ক্যু বলি। এজন্য যে ফখরুদ্দিন এবং মইনের ক্ষমতা গ্রহণের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কয়েকটা বড় এনজিও, দুটি নিরপেক্ষ পত্রিকা। এদের উদ্দেশ্য ছিল হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে এখানে একটা অনির্বাচিত সিভিল সরকার গঠন করা। সেখানে ইউনুস-কামাল ক্ষমতায় আসবে। শেখ হাসিনার মুক্তিলাভ, এই তিনটি ষড়যন্ত্র হয়ে যায়। যদি বেরিয়ে আসতে না পারতো দেশের কপালে অত্যন্ত দুঃখ ছিল। তাতে ইউনুসের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, ডা. কামাল হোসেনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, বিএনপির সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে।
 
প্রবাসী এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আমি একদিক থেকে ১/১১ এর সরকারকে বলি একতরফা। সবাই মিলে ১/১১ সরকারকে দোষারূপ করে কিন্তু আমি মনে করি ইয়াজউদ্দিনের হাত থেকে ক্ষমতা না নিলে গৃহযুদ্ধ হতো। ভয়াবহ রক্তপাত হতো। এই রক্তপাত থেকে ১/১১ সরকার আমাদের দেশটাকে বাঁচিয়েছে। এজন্যে এ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন শেখ হাসিনা এই সরকারের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরে এরা আস্তে আস্তে বিপদগামী হয়। এই সরকারের যে প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন, যে কথা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল কিন্তু আবার পেছন থেকে কলকাঠি শুরু হয়। এদেরকে স্থায়ী করার জন্য। যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন সামরিক-বেসামরিক, তারা দুর্নীতিবাজ হয়ে পড়ে। অতি উচ্চাঙ্ক্ষী হয়ে উঠে। এদের মধ্যে সিভিল সার্ভিসের আকবর আলী একজন, তিনি নানা তথ্য দিয়ে, নানাভাবে এই সরকারকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনাকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্রে আমার সন্দেহ আকবর আলী খানও ছিল।

আমি বলি যে, তার মাথায় হুলিয়া, তাকে বিদেশি পাঠিয়ে দেশে আসতে না দেওয়া, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়া। সমসাময়িককালের কোন নেত্রী বা নেতা এতো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেনি। তাকে সাব-জেলে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে তার খাবারে বিষ দেওয়া হচ্ছিল। স্লো পয়জনিং, যেটা ড. মোদাচ্ছের আলি গিয়ে ধরেন এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেন। নানাভাবে চেষ্টা চলছিল, তাকে মারার কম চেষ্টা হয়নি। চট্টগ্রামে একবার মারার চেষ্টা হয়েছিল, গ্রেনেড হামলা করে মারার চেষ্টা করা হয়েছে, তারপরে সাব-জেলে নিয়ে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু হাসিনা প্রতিবারই সে নীলকণ্ঠের মতো বেরিয়ে এসেছে। সমস্ত বিপদ নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন, বেড়িয়ে এসেছেন, দেশে আবার গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্য বলা যেতে পারে, ১১ জুনকে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের দিবস। যেটা আজকে আপনারা পালন করছেন।

এই দিনটি না এলে, শেখ হাসিনা এই দিনে মুক্ত না হলে ১/১১ সরকার অপসারিত হতো এবং সেখানে হয় খালেদা জিয়া না হয় কামাল হোসেন চক্র ক্ষমতায় আসতো এবং দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। শেখ হাসিনার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বার বার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশটাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিয়েছেন। তবে সব সরকারের ব্যর্থতা থাকে, এই আওয়ামী লীগ সরকারেরও আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার বক্তব্য ১১ জুন তারিখে যদি শেখ হাসিনা মুক্ত না হতেন তাহলে দেশ তিনটি ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারতো না। 

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আজ ১১ জুন, এ দিনটিকে আমরা বলে থাকি গণতন্ত্র মুক্ত হওয়ার দিন। ২০০৬ সালে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন ছিল। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকটি ষড়যন্ত্রমূলক কাজ হয়েছে। যেটি হয়তো তখন অনেকেই বুঝতে পারেননি। সেই সময়ের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ বিচারপতিদের বয়স ২ বছর বাড়িয়ে দেন। যদিও এই দাবিটি ছিল অনেক পুরনো। যখন বয়স বাড়ালেন, তিনি কিন্তু কোন সৎ উদ্দেশ্যে বাড়াননি। সেটিকে সামনে রেখে, আগামীতে যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন তিনি যেন কেএম হাসান হন। যিনি একসময় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, জিয়াউর রহমানের সময় রাষ্ট্রদূত ছিলেন, যাতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। এটা ছিল মূল উদ্দেশ্য। এক নম্বর ষড়যন্ত্র ছিল বয়স বাড়ানো, দুই নম্বর ছিল সুশীল সমাজের মিলন মেলা। এর মধ্যে আবার ভোটার লিস্ট তৈরি করা শুরু হলো। তৈরির সময় বিভিন্ন জায়গায় এমন সব ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা অনেক আগে মারা গিয়েছে। পরবর্তীকালে হিসাব করে দেখা গেছে, আনুমানিক ১ কোটি ২২ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বললো- আমরা কেএম হাসানকে মেনে নিবো না। এখানে দু’তিনটি বিদেশী দূতাবাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, নিন্দনীয় ভূমিকা পালন করে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে শেখ হাসিনার কাছে দূতিয়ালী করার চেষ্টা করে, ওনাকে যাতে গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ওনাকে তো আমরা গ্রহণ করবো না। কেননা উনি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সম্পর্কে সংবিধানের সর্বশেষ ধারা ছিল, যিনি প্রেসিডেন্ট তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন। মাঝখানের ধারাগুলো এড়িয়ে ইয়াজউদ্দিন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ঘোষণা করা হলো। উনি ছিলেন খুবই সাদামাটা লোক। তার নিজের কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিল না। তার সকল সিদ্ধান্ত নেন তারেক রহমান ও বেগম জিয়া। তারা যেটা বলে সেটা করে। তিনি ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। তিনি নিজ থেকে ক্ষমতা নিবেন ওই সাহস তার নেই। বেগম জিয়া ও তারেক রহমান থেকে যদি গ্রিন সিগন্যাল না পেতেন কখনও তিনি এই কাজটি করতেন না। তখন সারাদেশ জ্বলে উঠলো যে, আমরা ইয়াজউদ্দিনকে মানি না। তখন ১/১১ বিষয়টি আসলো। ফখরুদ্দিন ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। তার পেছনে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ খান। 

মইন ইউ আহমেদ ইয়াজউদ্দিনকে বাধ্য করলেন দেশে এমার্জেন্সি ঘোষণা করতে। তার না করার কোন সাহস ছিল না, এমার্জেন্সি ঘোষণা হলো। ফখরুদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিলেন। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেনাবাহিনী। আসলে পেছনে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ। এই সময়ে শেখ হাসিনা বিদেশে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব ছিল ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। কিন্তু তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কাজ শুরু করলেন। ধরপাকড় শুরু করা হলো এবং আওয়ামী লীগের অনেক বর্ষীয়ান নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হলো। অন্যদিকে বেগম জিয়া বহালতবিয়তে ছিলেন, তার দলেরও তেমন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তার দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কোন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি। 

শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরতে চাইলেন, তখন বলা হলো- না আপনি এখন দেশে ফিরবেন না। সব বিমান সংস্থাকে বলা হলো, শেখ হাসিনাকে ঢাকায় নিয়ে আসলে বিপদ হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তাকে আসতে দিতে বাধ্য হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা আসার কিছু দিন পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। সংসদ ভবন এলাকার একটি বাড়িতে তাকে রাখা হয়। একই সময় বেগম জিয়া ছিলেন মুক্ত। তখন অনেক কথা উঠলো। শেখ হাসিনার অনেক পরে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ব্যালেন্স করার রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তারা বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেছিলেন, সক্ষমও হয়েছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগে করা হয়েছিল কিন্তু এখানে ওই রকম সক্ষম হননি।

সুতরাং শেখ হাসিনা আজকের দিনে মুক্ত হয়েছিলেন। দিনটিকে মনে হয়েছিল ঈদের দিন। অন্য কোন কারণে না, শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছেন বলেই। আওয়ামী লীগের সাথে গণতন্ত্রের একটা সম্পর্ক আছে। সেটি ১৯৪৯ সাল থেকে যখন আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল, তখন থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলাদেশের ইতিহাস দেখি যতগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে আওয়ামী লীগ কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হয়নি। সেজন্য আজকের দিনটিকে সামনে রেখে আমরা বলি, বলছি আজকে হলো গণতন্ত্র মুক্তি পাওয়ার দিন। আজকের দিনে যদি শেখ হাসিনা মুক্তি না পেতেন তাহলে গণতন্ত্র আমরা সহজে পেতাম না।

আ ব ম ফারুক বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১১ জুন যদি মুক্তি না পেতেন, যদি মাইনাস ওয়ান বা মাইনাস টু সত্যি সত্যি বাস্তবায়িত হতো তাহলে কি হতে পারতো? আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, ব্যক্তিগত বিশ্বাস হলো- যে ধারাটি শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের দিকে যাওয়ার, বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে যাবে এবং পাকিস্তানের যাওয়ার মতো ক্ষেত্র প্রস্তুত যেটা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে, সেটি পত্র-পুষ্পে পল্লবিত হয়ে, সুশভিত হয়ে যে যাত্রা শুরু সেই ধারাবাহিকতায় এটি চলেছিল। নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নানা রকম খেলা চলছিল। 

আমার ধারণা, পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি সরকার গঠন করতে না পারতেন এবং তিনি যদি শক্তভাবে এই জঙ্গীবিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতেন- আজকে বাংলাদেশটা প্রায় আফগানিস্তান হয়ে যেতো। অনেকের মতো আমরা যারা মুক্ত বুদ্ধির যে সমাজটা চেয়েছিলাম, তারা আর পেতাম না হারিয়ে যেতো। আমি কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, তিনি শক্তহাতে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছেন। বিশেষ করে একটা ধর্ম নিরপেক্ষ একটা অসাম্প্রদায়িক সরকার আমাদের দরকার- এই ধারণাটিকে তিনি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এজন্য আমরা তার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।

মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছিলেন এবং সেটি ঘিরে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটার যোগসূত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু। তবে এই ঘটনার বীজটি রোপিত হয়েছিল ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন বাংলাদেশ সফরে এলেন এবং এই সফর ঘিরে যে ঘটনা ঘটে সেখানে এই বীজটি রোপিত হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে এই বাংলাদেশকে যদি পরাশক্তির একটি তাবেদার এবং স্যাটেলাট রাষ্ট্র করতে হয়, এ অঞ্চলে তাদের যে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে সেটি অর্জন করার জন্য শেখ হাসিনা যদি রাজনীতিতে থাকে এবং জীবিত থাকে তাহলে সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়। সুতরাং শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে এবং পারলে দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকা হয়। সেই ষড়যন্ত্রের ছক অনুসারে এই ওয়ান এলেভেন ঘটেছে এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটেছে।

বাংলাদেশ থেকে যারা এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছিলেন তাদের সবাইকে আমরা চিনি। তারা বড় বড় শিক্ষিত লোক ছিলেন, ডিগ্রিধারী লোক ছিলেন, জ্ঞানী লোক ছিলেন। কিন্তু আমার উপলব্ধি বলে, মানুষ যখন ক্ষমতা, অর্থ লোভ এবং কোন বিদেশি চক্রান্তে জড়িয়ে যায় তখন বুদ্ধি নাশ হয়। বুদ্ধি নাশ হওয়ার কারণে তখন ইতিহাসের শিক্ষা তারা দেখতে পায় না। এই যে শেখ হাসিনাকে তারা গ্রেফতার করলো, যদি পেছনে তাকাতো তাহলে কিন্তু এই কাজ তারা কখনও করতো না। 

পাকিস্তানের আমলে আইয়ুব খান, সামরিক বাহিনী ৬ দফা দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুকে ফিনিস করতে চেয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ফিনিস করতে পারেনি। বরং তারাই ফিনিস হয়ে গেছে। সেই ফিনিসের সূত্র ধরে পাকিস্তান ফিনিস হয়ে গেছে এবং পাকিস্তান এখন আরও ফিনিস হওয়ার চূড়ান্ত দ্বারপ্রান্তে। এই শিক্ষাটা তাদের সামনেই ছিল। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্ত হওয়ার পর যেরকম একটা অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল ধানমন্ডিতে, ঠিক একই দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল ২০০৮ সালের ১১ জুন সুধা সদনে।

প্রসঙ্গত, প্রায় এক ঘন্টা ১৩ মিনিট ধরে আয়োজনটি দেখা যাবে- https://www.facebook.com/sampritee.bangladesh এই লিংকে। একইসঙ্গে দেখা যায় একুশে টেলিভিশনের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/Ekushey24online)-এ।

 

মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সম্প্রীতি বাংলাদেশ নিয়মিত ওয়েবিনার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি সংলাপের ৭৩তম পর্ব।

কবি নজরুলের বাণী-  ‘গাহি সাম্যের গান’-কে ধারণ করে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর, জাতীয় জাদুঘরের শওকত ওসমান মিলনায়নে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। 

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই মূলত সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বিশিষ্ট অভিনেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আহ্বায়ক হিসেবে এবং সুপরিচিত চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডক্টর মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল সদস্য সচিব হিসেবে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশে’র দায়িত্ব পালন করছেন। 

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে সভা-সমাবেশ ও করোনাকালীন ওয়েবিনারের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ প্রচারের কাজ করছে সংগঠনটি। এখন সীমান্তের ওপারেও প্রশংসিত হয়েছে সংগঠনটি। মুচকুন্দ দুবের মতো সাবেক কূটনীতিবিদ, যোগেন্দ্র যাদবের মতো সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ, কিংবা গোবিন্দ নিহালনি-কবীর খানের মতো পরিচালকরা পর্যন্ত তাদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এসএ/