ঝুঁকিভাতা ও বকেয়া বেতনের দাবি বেসরকারি চিকিৎসকদের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রবিবার
বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সময়োপযোগী বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং ঝূঁকিভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নন-গভ: ডক্টরস এসোসিয়েশন। এছাড়া করোনাকালে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বকেয়া বেতন বোনাস প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।
রোববার (১৩ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
বেসরকারি চিকিৎসকদের নব গঠিত সংগঠন ‘বাংলাদেশ নন-গভ: ডক্টরস এসোসিয়েশন (বিএনজিডিএ)’ এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনজিডিএ’র সভাপতি ডা. খালেদ শওকত আলী, সহ-সভাপতি ডা. শাহেদ হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ওবায়দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফারহান সাদিক খান ও অর্থ সম্পাদক ডা. দেবদাস পাল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অতীতের চেয়ে এখন অনেক উন্নত ও সক্ষম। স্বাস্থ্য খাতের এই উত্তোরত্তর উন্নতিতে সরকারি চিকিৎসকদের পাশপাপাশি বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশের চিকিৎসকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই বেসরকারিখাতে কর্মরত। কিন্তু এই খাতের চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছে নানান অসমাঞ্জস্যতা, বৈষম্য, অপ্রাপ্তি ও হতাশা। স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বেসরকারি চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই, কর্মস্থালে পেশাগত নিরাপত্তা নেই। এজন্য চাকরি বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নেই তাদের। এই পরিস্থিতিতেও অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন ঠিকভাবে পরিশোধ করছে না। ফলে তাদের মাঝে অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এতে আরও বলা হয়, করোনাকালেও (কোভিড-১৯) জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত ৯ জুন পর্যন্ত ১৫৮জন চিকিৎসক মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসরকারি চিকিৎসক। এছাড়া সাড়ে চার হাজার বেসরকারি চিকিৎসক এই করোনাকালে বিনা বেতনে জাতীয় টেলিমেডিসিন হটলাইনের (৩৩৩) মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। তারা কোনো ঝুঁকিভাতা বা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না প্রণোদনাও। এমনকি কাজের স্বীকৃতিও পাচ্ছেন না। যা আন্তর্জাতিক তথা বাংলাদেশ লেবার আইন ২০০৬ এর সুস্পষ্ট লংঘন।
বেসরকারি চিকিৎসকদের নানা সমস্যা ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
দাবিগুলো হচ্ছে-
১. বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকল্পে, বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য, বেসরকারি চিকিৎসক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট, যুগোপযোগী বেতন কাঠামো ও সার্ভিস রুল প্রণয়ন এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করা।
২. করোনা মহামারীর সময় যে সকল প্রতিষ্ঠান চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি অথবা আংশিক কর্তন করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চিকিৎসকদের সমস্ত বকেয়া বেতন বোনাস অনতিবিলম্বে পরিশোধ করা।
৩. কর্মক্ষেত্রে সকল চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত সময়ে প্রণীত ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন’ এর বাস্তবায়ন করা।
৪. বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের তদারকিতে বেসরকারি চিকিৎসক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা এবং
৫. চিকিৎসকদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্য খাতে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রণোদনা ও সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেসরকারি চিকিৎসকদের এসব সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও তার প্রতিকারের লক্স্যে গত বছরে জুন মাসে ‘একত্রে থাকুন, পরিবর্তন আসবেই’ শ্লোগান নিয়ে ‘বাংলাদেশ নন-গভ: ডক্টরস এসোসিয়েশন (বিএনজিডিএ)’ গঠন করা হয়। ডা. দেবদাস পালকে প্রধান করে গঠন করা হয় ২৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। পরবর্তীতে গত ২৫ মে গঠন করা হয় সংগঠনটির ১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
তিন বছর মেয়াদের এই কমিটির সভাপতি করা হয় ডা. খালেদ শওকত আলীকে। কমিটির অন্যরা হলন-সহ সভাপতি ডা. শাহেদ হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- ডা. কাওসার আহমেদ ও ডা. অংকুর দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফারহান সাদিক খান, অর্থ সম্পাদক ডা. দেবদাস পাল, দপ্তর সম্পাদক ডা. সজীব নজরুল হৃদয়, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. কাজী সিফাত আক্তার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. মুশতাক রহমান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আকাশ মাহমুদ সোহেল, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক- ডা. নাহিদ আনোয়ার খান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারসা রহমান এবং যুগ্ম মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুমাইয়া সামাদ দীপা।
এসি