পবিপ্রবি’র ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ
পবিপ্রবি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৩২ পিএম, ১৪ জুন ২০২১ সোমবার
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী খুলনার ডুমুরিয়ার দেবাশিষ মণ্ডল ২০১৮ সালের ১৪ মে কুষ্টিয়ায় আত্মহত্যা করেন। মেধাবী ছাত্র হওয়ায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু চাকরি পেতে ঘুষের টাকা জোগাড় না হওয়াতেই মেধাবী দেবাশীষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানায় তার পরিবার। এ ঘটনায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি তারা। তবে দেবাশীষের আত্মহত্যার জন্য পবিপ্রবি’র তিন শিক্ষককে দায়ী করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
গত ৩০ মে দেবাশীষের আত্মহত্যার জন্য পবিপ্রবি’র তিন শিক্ষককে দায়ী করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন। নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন- কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন হোসেন ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নওরোজ জাহান লিপি।
এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, পবিপ্রবি’র প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী ছিলেন দেবাশীষ মণ্ডল। ওই পদে চাকরি দেয়ার জন্য তার কাছে বিপুল অংকের ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ছিলেন সেরা। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, নওরোজ জাহান লিপি ও শাহীন হোসেন প্রথমে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন দেবাশীষের কাছে।
দেবাশীষ যে কোন মূল্যে ওই চাকরিটি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে তার কাছে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাড়তি ৫ লাখ টাকা যোগার করতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আর এ কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন দেবাশিষ মণ্ডল।
এ ঘটনায় পবিপ্রবি’র শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও নওরোজ জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে নোটিশে দাবি করা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, ওই নিয়োগে দেবাশীষ মণ্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। অথচ ওই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪। যা দেবাশীষের চেয়ে কম। একইভাবে অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের ছোটভাই ও নওরোজ জাহান লিপির দেবর মো. কামরুজ্জামান ও শাহীন হোসেনের বড় বোন নাজমুন নাহারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দুটি বাতিলের দাবিও করা হয় এই লিগ্যাল নোটিশে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবি’র উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী। এছাড়াও এসব কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত শিক্ষক মনিরুজ্জামান, নওরোজ জাহান লিপি ও শাহীন হোসেনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা ১৫ জুন সকাল ১০টার মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে নোটিশটিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নোটিশে অভিযুক্ত তিন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মো. শাহিন হোসেন ও নওরোজ জাহান লিপি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে তারা কেউই কোনভাবে জড়িত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দেবাশীষ আত্মহত্যার এত বছর পরে এমন নোটিশ পাঠানোটা নিশ্চয়ই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুরো বিষয়টিকে আইনিভাবে মোকাবেলার করা হবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল এডভাইজরি শাখাকে বলা হয়েছে। আইন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এএইচ/