বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত
করোনা ভয়কে জয় করে রক্তদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ততা বাড়ছে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৯ পিএম, ১৪ জুন ২০২১ সোমবার
রক্তগ্রহীতার প্রয়োজনে সারাবছর নিয়মিত রক্তদান ছাড়াও দেশের জাতীয় দুর্যোগময় সময়েও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বারবার মানুষের পাশে মানবিক মমতা নিয়ে দাঁড়ান স্বেচ্ছা রক্তদাতারা। তবে গতবছর করোনার শুরু থেকে তুলনামূলক কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানের চিত্র বদলেছে। করোনা ভয়কে জয় করে এখন স্বতঃস্ফূর্ত হতে শুরু করেছেন রক্তদাতারা। গতকাল ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে এমন চিত্রই দেখা গেছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম ল্যাবে।
সোমবার শান্তিনগর কোয়ান্টাম ল্যাবে রক্ত দিতে এসেছিলেন স্বেচ্ছা রক্তদাতা মমিনুল ইসলাম রিংকু (৪৬)। তার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তিনি কোয়ান্টামে গতকালসহ রক্ত দান করেছেন ৫১ বার। তিনি জানান, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে রক্ত দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি নিয়মিত রক্ত দান করি। করোনাকালেও আমি রক্তদান থেকে বিরত হইনি। আসলে মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দানের তৃপ্তিই আলাদা।
কোয়ান্টাম ল্যাবের দায়িত্বশীল শামীমা নাসরিন মুন্নী জানান, করোনাকালে আমাদের ল্যাবে প্রতিমাসে গড় চাহিদা ছিল প্রায় ১০ হাজার ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি প্রায় সাড়ে আট হাজার। অর্থাৎ চাহিদার পুরোটা মেটাতে হলে মানুষের মধ্যে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে। আরো স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে কোয়ান্টাম ল্যাবে এসে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দান করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে আমরা রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। ক্ষুদে বার্তা দিয়ে নিয়মিত রক্তদাতাদের অভিনন্দন জানিয়েছি। একই সাথে নতুনদের আহ্বান জানাই, যেহেতু রক্তের কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন দেশের রক্তের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত রক্ত দিন। মানবিকতার পরশে মুমূর্ষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তদান যে গ্রহীতাদের জীবনকেই শুধু বাঁচাচ্ছে তা-ই নয়, নিয়মিত রক্তদান একজন রক্তদাতাকেও দিতে পারে অসাধারণ সব শারীরিক উপকার। নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে বলেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও বাড়তি ওজন হ্রাস, নিয়মিত রক্তদানে সুস্থতা যাচাই এবং রক্তদানের মাধ্যমে প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত সুস্থ সবল যেকোনো মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। আর কোয়ান্টামের অত্যাধুনিক ল্যাবে এক ব্যাগ রক্তকে নানা উপাদানে ভাগ করে চারজন মুমূর্ষুকে বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম প্রায় ১২ লাখ ৯৩ হাজার রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পেরেছে।
আরকে//