ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে কাঁঠালের বাম্পার ফলন

মীর মো. শাহীন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ১৫ জুন ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৩০ পিএম, ১৫ জুন ২০২১ মঙ্গলবার

জাতীয় ফল কাঁঠাল। এই ফলকে বলা হয় ফলের রাজা। কাঁঠাল খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এই ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। কাঁঠাল শুধুমাত্র একটি মৌসুমী ফলই নয়- সহায়ক খাদ্য ও অর্থকরী ফসলও। আর এই ফলেরই বাম্পার ফল হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায়।

বাগানের গাছগুলোতে ঝুলছে সারি সারি কাঁঠাল। যা এখন সবার নজর কাঁড়ছে। কোন কোন বাগানের আগাম জাতের কাঁঠালগুলো পাকতে শুরু করেছে। পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে কীট পতঙ্গরা ভিড় করছে গাছে গাছে। আর সেই আনন্দে বাগান মালিকরা গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। এ এলাকার বাগানগুলোর পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার দু’ধারে, স্কুল-কলেজের চত্বরে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। আর এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠালের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে। 

চারা লাগানোর পর সাধারণত কাঁঠাল গাছের তেমন কোন যত্ন নেয়ার দরকার হয় না। শুধুমাত্র গুরু-ছাগলের আক্রমণ ও ঝড়ে যাতে ভেঙ্গে না পড়ে তার জন্য বড়জোর একটা খুঁটি ও খাঁচা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের চারা আপনা থেকেই বেড়ে উঠে। এক কথাই অনাদর আর অবহেলায় বন-বাদারে বেড়ে উঠে ফলের রাজা কাঁঠাল। 

অন্যান্য ফল ও গাছ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, কাঁঠাল গাছ নিয়ে তেমন কোন তৎপরতা নেই। কোন কোন পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় করে থাকেন। ২ থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম এসময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেণীর লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। 
এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঁঠালের ফলন ভাল হয়েছে। তবে ফলন বেশি হলে দাম না পাওয়ার আশংকাও রয়েছে। কারণ বেশি ফলনে দাম পড়ে যাওয়ার রেওয়াজ আদিকালের। এদিকে অভাবের কারণে অনেকে কাঁঠালের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন। আসবাবপত্র প্রস্তুকারী ও ব্যবসায়ীরা এসব গাছ নামমাত্র মূল্যে কিনে ফায়দা লুটছে। 

উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কাঁঠাল গাছগুলো ফলে ফলে ভরে গেছে।  বিজয়নগর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমুড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁ ও পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় চার শতাধিক কাঁঠাল বাগান। 

চলতি বছর এ উপজেলায় ১২০-৩৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেক বাড়ীতে রয়েছে ৫/৬টি করে কাঁঠাল গাছ। যা প্রত্যেক পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। প্রতিটি গাছে ৬০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ফল ধরেছে।

বিজয়নগর উপজেলায় সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের রানওয়ের বাজার, সিংগারবিল ইউনিয়নের মেরাশানি বাজার, সিঙ্গারবিল বাজার, চম্পকনগর ইউনিয়নের চম্পকনগর বাজার ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মুকুন্দপুর, ছতরপুর, হরষপুর বাজারে পাইকারিভাবে কাঁঠাল বেচাকেনা করা হয়। 

এসব বাজার থেকে কুমিল্লা, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কাঁঠাল ক্রয় করে যানবাহনে বোঝাই করে নিয়ে যান। এ অঞ্চলের কাঁঠালের স্বাদ অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি হওয়ায় অন্য এলাকায় এর কদরও রয়েছে। 

এলাকাবাসীরা জানান, সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চাষিরা পাকা ও কাঁচা কাঁঠাল নিয়ে আসেন। সেসব বাজার থেকে পাইকাররা বিভিন্ন যানবাহনে করে কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। ৎ

ব্যবসায়ী আমির আলী ও জয়নাল আবেদীন জানান, ফলের মৌসুমে ফলের ব্যবসা করি। উপজেলার বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান ও এলাকা থেকে কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে থাকি। কাঁঠালের প্রকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে থাকি। সিজনাল ফলের ব্যবসা করে সংসারের খরচ চলে।  

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাদিউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফল ও ফসল উৎপাদনে  সর্বদায় কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে কৃষকরা ভালো ফল উৎপাদন করতে পারেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খিজির হোসেন প্রামানিক বলেন, বিজয়নগর দিন দিন কৃষিবান্ধব উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এখানে সব ধরনের ফলই চাষ হচ্ছে। লিচুর জন্য বিখ্যাত বিজয়নগর। আর কাঁঠালের জন্যও প্রসিদ্ধ এ অঞ্চল। এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। 

এই অঞ্চলে নরম, চাউলা ও রসালো এই তিন ধরনের কাঁঠাল চাষ হয়। এ বছর কাঁঠাল বিক্রি প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে বলে মনে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তা খিজির হোসেন।

এএইচ/