শ্লীলতাহানির শাস্তি তিন থাপ্পড়, জরিমানার টাকা মাতব্বরের পকেটে
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৫৪ এএম, ১৭ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:০১ এএম, ১৭ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার
নওগাঁর মহাদেবপুরে স্কুলছাত্রীর (১৫) শ্লীলতাহানির ঘটনায় খোদাবক্স (৪৪) নামে এক বখাটেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ তিন থাপ্পর মেরে বিচার সালিশ করা হয়েছে বলে গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সেই জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগীকে না দিয়ে মাতবর নিজেই পকেটেস্থ এবং জোর করে ওই ছাত্রী ও তার পিতার স্বাক্ষর সাদা স্ট্যাম্পে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আলোচিত ঘটনাটি মহাদেবপুর উপজেলার স্বরূপপুর নিচপাড়া এলাকায় ঘটে। গত ১৩ জুন রাতে বিচার শালিসের বৈঠক হলেও গতকাল বুধবার (১৬ জুন) বিষয়টি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ১০ জুন বিকেলে ওই ছাত্রী বাড়ির নিজ কক্ষে লেখাপড়া করছিল। এসময় বাড়িতে কেউ ছিল না। এই সুযোগে একই গ্রামের ৩ সন্তানের জনক খোদাবক্স বাড়িতে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানী ঘটায়। ছাত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে খোদাবক্স পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ছাত্রীর পিতা গ্রামের মাতব্বরের কাছে বিচার দাবি করেন। মাতব্বররা বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ জুন রাতে সালিশ-বৈঠকে বসেন। সেখানে গ্রামের মাতব্বর মধ্যে রাজ্জাক মণ্ডল, অভিযুক্ত খোদাবক্সের চাচাতো ভাই সেকেন্দার আলীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েটির বাবা অভিযুক্ত খোদাবক্সকে তিনটি থাপ্পড় মারেন। এছাড়া সালিশে মাতব্বররা খোদাবক্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং সাদা স্টাম্পে ওই শিক্ষার্থী ও তার পিতার স্বাক্ষরও নেয়া হয়।
এ বিষয়ে ওই স্কুল ছাত্রীর বড় ভাই আনোয়ার হোসেন সুবিচার পাননি এমন অভিযোগ করে বলেন, ‘অভিযুক্ত খোদাবক্স একজন অসৎ চরিত্রের মানুষ। তিন সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও এলাকার মেয়েদের প্রতি কুনজর দিয়ে বেড়ান। এর আগেও তার বিরুদ্ধে গ্রামের অন্য এক নারীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু গ্রামের মধ্যে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি সেবার বেঁচে যান। এবারও তার কোনো শাস্তি হলো না।
অভিযুক্ত খোদাবক্সের চাচাতো ভাই গ্রামের প্রধান মাতব্বর সেকেন্দার। তিনি প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মাতব্বরদের চাপ দিয়ে আমার বোনের শ্লীলতাহানীর মূল্য তিন থাপ্পড় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সেই টাকাও আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। জরিমানার টাকা সেকেন্দার মাতব্বরের পকেটে গেছে বলে জানান ছাত্রীর ভাই আনোয়ার।
ভুক্তভোগীর ভাবী কুলসুম বিবি বলেন, ‘আমরা গরীব, তাই সালিশ বৈঠকে ধর্ষণ চেষ্টার সত্যতা পাওয়ার পরেও দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হয়নি। বিচারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে জোর করে সাদা স্টাম্পে আমার ননদ ও শ্বশুড়ের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এখন সুষ্ঠু বিচার না পাইলেও মাতব্বরদের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারব না। কারণ এখন যদি আমরা এ ঘটনার বিচার চাইতে থানা কিংবা কোর্টে যাই তাহলে গ্রামেই থাকতে পারব না।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গ্রামের মাতব্বর সেকেন্দার আলী সালিশ বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গ্রামের লোকজনের যৌথ উদ্যোগে রাজ্জাক মাতব্বরের বাড়ির খলিয়ানে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। জরিমানার টাকা আমার কাছে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মেয়েটির যখন বিয়ে হবে এই টাকা তখন খরচ করা হবে। কারণ মেয়েটির বাবা খুব গরীব। এই টাকা তাদের হাতে দিলে তা খরচ হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, এ ধরনের ঘটনা গ্রামের সালিশ বৈঠক করার কোন এখতিয়ার মাতব্বরদের নাই। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই বিষয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারে।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ ধরনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএইচ/