এক মেহেদীর কাছেই হারলো শুভাগতের মোহামেডান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ২৪ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার
৫৮ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা শেখ মেহেদী হাসান
শুভাগত হোমের টর্নেডো ইনিংসে চড়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে সাকিবহীন মোহামেডান। তবে এক মেহেদী ঝড়ে সেই চ্যালেঞ্জকে উড়িয়ে দিয়ে তিন বল হাতে রেখেই দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো মাহমুদুল্লাহর গাজী গ্রুপ।
প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান তোলে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অধিনায়ক শুভাগত। জবাবে শেখ মেহেদী হাসানের ব্যাটিং ঝড়ে তিন উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পায় গাজী। সেঞ্চুরীর আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৯২ রানে আউট হন শেখ মেহেদী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডিপিএল সুপার লিগে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ব্যাট করতে নেমে ৪০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় মোহামেডান। আব্দুল মজিদকে বোল্ড করেন শেখ মেহেদী হাসান।
গাজী গ্রুপকে দ্বিতীয় উইকেটও এনে দেন স্পিনার মেহেদী। এবার তাঁর শিকার দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা পারভেজ হোসেন ইমন। ফেরার আগে ৩২ বলে ৪১ রান আসে ইমনের ব্যাট থেকে। তার ইনিংসে ছিল ২টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার।
এরপর শামসুর রহমান ৮ রান, ইরফান শুক্কুর ২২ বলে ২৮ ও নাদিফ চৌধুরী (০) আউট হয়ে ফিরলে খেই হারিয়ে ফেলে মোহামেডান। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রাখে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। কিন্তু শেষ দিকে এসে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে গাজীর হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেন মোহামেডানের অধিনায়ক শুভাগত হোম।
শেষ দুই ওভারেই তুলে নেনে ৩৫টি রান। সেইসঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদুল হাসান লিমনকে নিয়ে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। যেখানে লিমনের অবদান ছিল ১৫ বলে ১৪ রান। লিমন ফিরলেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে শুভাগত করেন ৩১ বলে ৫৯ রান। স্ট্রাইকরেট ১৯০.৩২! তার এই ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে মোহামেডান পেয়েছে ১৬৫ রানের পুঁজি। গাজী গ্রুপের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান, রাকিবুল আতিক ও মহিউদ্দিন তারেক।
জবাব দিতে নেমে মোহামেডানের মতোই ষষ্ঠ ওভারেই ৪১ রান তুলে উইকেট হারায় গাজী। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা শুভাগতের মায়াবী স্পিনে পরাস্ত হয়ে ফেরেন বড় ইনিংস খেলতে না পারা সৌম্য সরকার। ১৭ বলে ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর দ্রুত আরও চারটি হারিয়ে এখন ধুঁকতে থাকে গাজী গ্রুপ। ৯৯ রানেই পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে মাহমুদউল্লাহর দল। তবে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের ভরসা হয়ে খেলে যান ওপেনার শেখ মেহেদী হাসান। বলতে গেলে একাই দলকে পৌঁছে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়ের বন্দরে।
কেননা, ওপেনার সৌম্য ছাড়া ম্যাচে দুই অঙ্কের দেখা পেয়েছেন আর মাত্র দুজন। ইয়াসির আলী ৬ বলে ১১ রান করে আউট হন এবং আকবর আলী ৯ বলে অপরাজিত ১১ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। বাদবাকী সবটুকুই জুড়ে ছিলেন কেবলই মেহেদী হাসান।
মোহামেডানের বোলারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন একাই। ১৬তম ওভারে দলীয় ১১৮ রানের মাথায় আরিফুল (৫) যখন হিটউইকেট হয়ে ফেরেন তখন জয়ের জন্য দলের প্রয়োজন ২৭ বলে ৪৮ রান। আকবর আলীকে সঙ্গী করে সেই অবস্থা থেকে দলের জয় ছিনিয়ে আনেন মেহেদী।
শেষ তিন ওভারে গাজীর প্রয়োজন দেখা দেয় ৩৬ রান। আবু জায়েদের করা ১৮তম ওভারে তিনটি চার হাঁকিয়ে মেহেদী তুলে নেন ১৬ রান। পরের ওভারে রুহেল মিয়াকে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে তুলে ফেলেন আরও ১৫টি মূল্যবান রান। যাতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য দলের প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৫টি রান আর শতক পূরণ করতে মেহেদীর লাগতো ৮টি রান।
ইয়াসিন আরাফাতের প্রথম বলেই হাঁকাতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন মেহেদী। কয়েকবার রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার আউট দিলে শেষ হয় মেহেদীর শতকের স্বপ্ন। তবে ১১টি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে খেলা ৫৮ বলে ৯২ রানের অনবদ্য ইনিংসটিই যে গাজীর জয়ের কারিগর। তাইতো জয়ের আনন্দে সেই আক্ষেপ ও হতাশা ভুলে গেলেন ম্যাচ সেরা মেহেদী।
এদিকে, এই জয়ে মোট ১৫ খেলায় ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে খেলার দৌড়ে এগিয়ে থাকলো গাজী গ্রুপ। অন্যদিকে, হেরে সেমির দৌড় থেকে অনেকটাই ছিটকে গেল সাকিবহীন মোহামেডান।
এনএস/