ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কথা হবে আলোর মাধ্যমে!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২২ পিএম, ২৪ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:২৬ পিএম, ২৪ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার

কথা হবে এমন আলোক রশ্মির মাধ্যমেই

কথা হবে এমন আলোক রশ্মির মাধ্যমেই

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তার ছাড়াই সংযোগ স্থাপন বা যোগাযোগ করা যায় অনেক কিছুতেই। বেতারের পর এখনকার জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম মোবাইল ফোন তার মধ্যে অন্যতম একটা ডিভাইস। যদিও এখনও টেলিফোন লাইন, ডিস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অন্যতম উপায় হচ্ছে তার। কিন্তু যেসব স্থানে টেলিফোন লাইনের সংযোগে সমস্যা বা মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন পড়তে হয় নানা সমস্যায়। এসব সমস্যার সমাধানে নতুন একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ শুভ্র নামে ময়মনসিংহের এক যুবক।

তিনি উদ্ভাবন করেছেন লেজার টকি নামে হ্যাকপ্রুফ একটি ডিভাইস। যার মাধ্যমে কথা বলা যাবে কোনওরকম তারের সংযোগ ছাড়াই। তবে এ ক্ষেত্রে লাগবে আলোক মাধ্যম। আলোক রশ্মি যতদূর পৌঁছবে, লেজার টকির সাহায্যে তার ছাড়া ততদূরই যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।

বিশেষ করে ঝড়-ঝঞ্জা, সাইক্লোনকবলিত এলাকার লোকজনের জন্য এই উদ্ভাবনটি খুব উপকারে আসবে। ঝড়-সাইক্লোনের পর ওইসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও টেলিফোন লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে যোগাযোগ করা যাবে হ্যাকপ্রুফ এই লেজার টকির সাহায্যে।

এছাড়া পাহাড়ি এলাকাসমূহ যেখানে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, সেখানে এই ডিভাইসের সাহায্যে যোগাযোগ করা যাবে খুব সহজেই। এছাড়া যারা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যান, তাদের ক্ষেত্রে যোগাযোগে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান সাদ্দাম উদ্দিন।

নিজের উদ্ভাবন নিয়ে সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ বলেন, করোনার এই ঘরবন্দী সময়কে কাজে লাগিয়ে আমি এই ডিভাইসটি তৈরি করেছি। হঠাৎ একদিন ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে খুঁনসুটি করার সময় মনে হলো- এই ডিভাইসটি তৈরি করা যেতে পারে। যেই চিন্তা সেই কাজ। অনেকটা খেলার ছলেই হ্যাকপ্রুফ লেজার টকি আবিষ্কার করেছি বলতে পারেন।

হ্যাকপ্রুপ এই ডিভাইসটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম উদ্দিন বলেন, লেজার টকিতে আছে একটা ট্রান্সফরমার, সঙ্গে থাকে রিসিভার। সেইসঙ্গে লাগবে টর্চলাইট কিংবা লেজার লাইট। এই লাইটের আলো যতদূর গিয়ে ট্রান্সফরমার-এ পড়বে, ততদূর পর্যন্ত শব্দ পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে কথোপকথনের জন্য কোনও তার লাগবে না।

তিনি বলেন, এই ডিভাইসটি টর্চলাইটে লাগানো থাকলে বহুদূর থেকে সহজেই যোগাযোগ করা যাবে। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে যারা মাছ ধরতে যান, তারা অন্ধকার রাতে বহুদূর থেকে তার ছাড়াই যোগাযোগ করতে পারবেন।

এ ছাড়া যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না, সেসব এলাকার লোকজন অল্প খরচে এই যন্ত্র ব্যবহার করে জরুরি যোগাযোগ সারতে পারবেন। ঘরবাড়ি ধসে পড়লে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে অন্ধকারে এই যন্ত্র দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা যোগাযোগ করতে পারবেন বলেও জানান সাদ্দাম।

এটাই তার প্রথম উদ্ভাবন নয়, এর আগে তিনি কৃত্রিম হাত উদ্ভাবন করেন। যার মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজ করা যাবে। যাদের হাত কাটা গেছে কিংবা হাত অকেজো, তারা কৃত্রিম এই হাতের সাহায্যে কাজ করতে পারবেন। বডি কন্ট্রোল সুইচের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এই হাত।

তার আবিষ্কারের মধ্যে আরও রয়েছে- রোবট ট্রলি, যেটি রিমোট দিয়ে পরিচালিত হবে। এছাড়া পানি ঠাণ্ডা করার পাত্র আবিষ্কার করেছেন তিনি। চার্জারের সাহায্যে মোবাইল থেকে চার্জ দিয়ে পানি ঠাণ্ডা করা যাবে।

ময়মনসিংহে জন্ম নেওয়া সাদ্দাম থাকেন রাজধানীর ওয়ারীতে। চাকরি করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ডিজিটাল বিভাগে। পড়ালেখা করেছেন ভারতের ব্যাঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাচেলর ডিগ্রি করে দেশে ফিরে কাজ শুরু করেন তিনি।

এনএস/