ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

চাপের মুখে চীনা উগ্র জাতীয়তাবাদী কূটনীতিকরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৮ পিএম, ২৯ জুন ২০২১ মঙ্গলবার

চীনের ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ কুটনীতিকরা এক বছর ধরে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে যাচ্ছে। তবে তারা চীনা জাতীয়তাবাদীদের অপ্রত্যাশিত বাঁধার মুখে পড়েছেন। চীনা এই কূটনীতিকদের বলা হয়েছে পশ্চিমাদের প্রতি ক্ষোভ বা উত্তেজনা কমাতে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে করোনা মহামারির জন্য চীনকে দায়ী করায় বিষয়গুলো নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা চলছে। এরপরই বেইজিং নতুন ধরনের কূটনীতি চালু করেছে। এসব কূটনীতিকদের বলা হচ্ছে ‘উল্ফ ওয়ারিয়র বা নেকড়ে যোদ্ধা।’ যুদ্ধবাজ চীনা জাতীয়তাবাদে উৎসাহিত কূটনীতিকদের জন্য এই টার্মটি একটি ব্লকবাস্টার চীনা ফিল্ম থেকে নেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং বিদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তারা কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে কর্কশ ও ঘৃণামিশ্রিত কথা বলেছেন। এমনিক বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব কিংবা তাদের সরাসরি অপমান করে কথা বলেছেন।

তবে কিছু বিষয়ে বিপরীতভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই মাসে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদেরকে চীনের ‘সফট পাওয়ার’ এর জন্য ‘নির্ভরযোগ্য, প্রশংসনীয় এবং সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোকে ‘‘চীনের বিষয়গুলো আরও ভালভাবে বলতে’’ সহায়তা করা উচিত।’

কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই মন্তব্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, ঘরোয়াভাবে চীনা জাতীয়তাবাদ সম্প্রসারণের কৌশল বেইজিংকে আরও জটিল কূটনৈতিক কৌশল তৈরির সামান্য সুযোগ করে রেখেছিল। নেদারল্যান্ডসের লিডেন এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ফ্লোরিয়ান স্নাইডার বলেন, ‘পরিবর্তিতভাবে দলের শীর্ষদের মধ্যে ব্যাপক উপলব্ধি হয়েছে যে চীনের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কৌশল সম্ভাব্য মিত্র ও বিদেশে খুব ভালোভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কূটনৈতিক নতুন কৌশলের জন্য একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য আইন দরকার।’

চীনের নেতারা নিজেদেরকে ফাঁদের মতো পরিচালনা করছেন। একদিকে তারা বিশ্বকে একটি শান্ত ও পরোপকারী চীনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, তারা নিজ দেশের জনগণকে একটি শক্তিশালী এবং দৃঢ়চেতা চীন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চীনা কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবীরা চীনা জাতীয়তাবাদীদের চাপের মুখে পড়েছেন। জাতীয়বাদীরা জুনে চীনের একজন বুদ্ধিজীবীকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করে। ওই ব্যক্তি জাপান সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি স্টাডি একচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জাপান সরকার প্রদত্ত টাকা নিয়েছিলেন এবং জাপান সম্পর্কে ইতিবাচকভাবে লিখেছিলেন।

যদিও বেইজিং বলছে, ওই প্রোগ্রাম দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা ও বন্ধুত্ব বাড়ানোর পথ ছিল। বিপরীত দিকে উইবো ব্যবহারকারীরা জাপানের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা ওই বুদ্ধিজীবীকে ‘জাপানের কুকর’ হিসেবে অভিহিত করেন। 

তাইওয়ানকে করোনভাইরাসের টিকা দান করতে সেখানে কয়েকজন মার্কিন সিনেটর সম্প্রতি ভ্রমণ করেন। পরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মৃদু তিরস্কার জানায়। এদিকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তিরস্কার জানানোকে নিয়ে উগ্র জাতীয়তবাদীরা ট্রল করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের ভ্রমণের প্রতিবাদ করেন তারা। উইবো ব্যবহারকারীদের একজন লেখেন, ‘তাদেরকে কেন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়নি। তারা আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে।’ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্যে করে একজন লেখেন, ‘খুব দুর্বল ও অদক্ষ।’

চীনা জাতীয়বাদী ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু শিজিন গত মাসে লেখেন, ‘সরকারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মানবতাবাদের ব্যানার ধরে রাখা উচিত। কমিউনিস্ট পার্টির একটি উইবো অ্যাকাউন্ট থেকে চীনের রকেট উৎক্ষেপণ ও ভারতে করোনায় মৃতদের দাহকর্ম নিয়ে উপহাস ও ব্যঙ্গ করার পর সম্পাদক হু শিজিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোনাথন হাসিদ এএফপিকে বলেছেন, ‘কখনো কখনো এই ‘‘নেকড়ে যোদ্ধা’’ মনোভাব হাতছাড়া হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যদি চীন এই ভাবমূর্তি নরম করার চেষ্টা করে তবে দেশের ভেতরে জাতীয়বাদীরা উগ্র হয়ে উঠবে। আবার যদি দেশের অভ্যন্তরে উগ্র দেশপ্রেমিকদের হয়ে কাজ করলে বিশ্ব সম্প্রদায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’ সূত্র: ডেইলি মেইল

এসি