সাহিত্যিক আবুল ফজলের জন্মবাষির্কী আজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৫১ পিএম, ১ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার
প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজলের জন্মবাষির্কী আজ। তিনি ১৯০৩ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার অন্তর্গত কেঁওচিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আবুল ফজল ছিলেন বাংলাদেশের একজন কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, সমাজসেবক ও বুদ্ধিজীবী। এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরও অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। তার কর্মে ছিল মহৎ ভাবনা। বর্ষীয়ান হয়েও তার মন ছিল সদা তারুণ্যদীপ্ত ও উচ্ছল। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরে তার সৃজনশীল কাজের মূল্যায়ন করেছেন সমকালীন ও উত্তরসূরি অনেকেই। ভূষিত হয়েছেন বহু সম্মাননায়।
বাবা মৌলবি ফজলুর রহমান ছিলেন চট্টগ্রাম জুমা মসজিদের ইমাম। মায়ের নাম গুলশান আরা। আবুল ফজলের শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। তিনি ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
মসজিদে ইমামতির মাধ্যমে তার পেশাগত জীবনের শুরু। পরে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করে ১৯৪১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর কলেজে বাংলা বিষয়ের লেকচারার পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে বদলি হন এবং সেখান থেকেই ১৯৫৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৭ সালের ২৩ জুন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
আবুল ফজল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯২৬) প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি এর সম্পাদক হন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক কুসংস্কার ও অন্ধ শাস্ত্রানুগত্য থেকে মানুষকে মুক্ত করা। এ উদ্দেশে তারা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাদের সে আন্দোলনের বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ১৯২৬ সালে তারা প্রকাশ করেন সমাজের মুখপত্র শিখা। মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও শিখার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিলেন। এ গোষ্ঠী তখন ঢাকায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন শুরু করে। তাদের আন্দোলনের মূলকথা ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’।
শিখাগোষ্ঠীর এ আন্দোলনের মাধ্যমে আবুল ফজল যে মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে তার রচনায় তার প্রতিফলন ঘটেছিল। তিনি সমাজ ও যুগসচেতন লেখক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। কথাশিল্পী হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, আত্মকথা, ধর্ম, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। স্বদেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা, সত্যনিষ্ঠা, মানবতা ও কল্যাণবোধ ছিল তার সাহিত্যকর্মের প্রতিপাদ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- জীবনপথের যাত্রী, রাঙ্গা প্রভাত, চৌচির, মাটির পৃথিবী, আয়েশা, আবুল ফজলের শ্রেষ্ঠ গল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি ও জীবন, সমাজ সাহিত্য রাষ্ট্র, শুভবুদ্ধি, সমকালীন চিন্তা, রেখাচিত্র, সফরনামা, দুর্দিনের দিনলিপি, প্রদীপ ও পতঙ্গ ইত্যাদি।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং আবদুল হাই সাহিত্য পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'ডক্টরেট' উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।
একজন সমাজসচেতন বুদ্ধিজীবী হিসেবে আবুল ফজল ছিলেন নিঃশঙ্ক চিত্ত। জাতির বিভিন্ন সংকটকালে তার নির্ভীক ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাঙালি জাতির প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ ও মমত্ববোধ। সমাজসচেতন এই মানুষটি ১৯৮৩ সালের ৪ মে চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
এসএ/