পাবনায় করোনা শনাক্তের রেকর্ড, বেড়েছে মৃত্যুর হার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:০৩ পিএম, ২ জুলাই ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৮:০৫ পিএম, ২ জুলাই ২০২১ শুক্রবার
পাবনায় প্রতিদিন রেকর্ড করোনা সনাক্তের সংখ্যা। কঠোর লকডাউন মানাতে পারছে না স্বাস্থ্যবিধি। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাবনার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে শতর্ক করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা শুরুর পর থেকে শুক্রবার সর্বোচ্চ ২৪৪ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলায় করোনা সনাক্ত হয়েছে ১৯২ এবং বুধবার ১৭৭ জনের শরীরে।
এছাড়া গত দুই দিনে করোনা উপসর্গে শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। ঈশ্বরদীতে ২ জন, সদর উপজেলায় ৫ জন, সাঁথিয়ায় ২ জন এবং বেড়া উপজেলায় ২ জনের উপসর্গে মৃত্যুর কথা স্থানীয়রা জানালেও, মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চেšধুরী জানান, জেলায় ১৩৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন ২৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই পাবনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এবং জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সচেতন না হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই বাড়বে। আক্রান্তের একটি বড় অংশ করোনা পরীক্ষা না করা। আর তাই হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ‘কঠোর’ লকডাউনে আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার চোখে পরার মতো। তবুও মানাতে পারছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রধান সড়কগুলোতে জনসমাগম কম হলেও, খুলেছে অলিগলির দোকানপাট, চায়ের স্টল। পৌর শহর এবং বাইরে চলাচল করছে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ও সিএনজি অটোরিক্সার মত যন্ত্রচালিত বাহন।
সরেজমিনে, পাবনার পৌর এলাকার রাধানগর, শালগাড়ীয়া, কালাঁচাদপাড়া, বেলতলা রোড, গোপালপুর, দিলালপুর, দক্ষিণ আটুয়া, কাচারীপাড়া, মন্ডলপাড়া, বাবলাতলা, আরিফপুর গাছপাড়া, সিঙ্গেবাজার, মেরিলমোড় ও বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায় সকালের বৃষ্টির মাঝেই খুলেছে পাড়া মহল্লার দোকানপাট। চায়ের দোকানগুলিতে ভীড় করে আড্ডা দিচ্ছেন নানা বয়সের মানুষ। অনেকেই বের হয়েছেন আইন-শৃংখলা বাহিনী কতটা কঠোর হয় তা দেখতে।
পাবনা রথ ঘর এলাকার রাকিব চা ষ্টলে বসে বলেন, হোটেল রেস্তুরা খাবার পার্সেল করতে পারবে। আমরা চা ওয়ান টাইম গ্লাসে পার্সেল নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পান করছি। তাহলে চা স্টল বন্ধ থাকবে কেন।
শহরের লাইব্রেরী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা সবজির বাজার বসানো হয়েছে পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর বালিকা বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে। ক্রেতা সমাগম কম, তবে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা হচ্ছে না। ক্রেতা বিক্রেতার অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। একই চিত্র শহরের বড় বাজার, মাসুম বাজার, কলেজ গেট বাজারে। খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও নিউ মার্কেট, প্রেসক্লাব গলি, দইবাজার, বড় বাজার এলাকার লুকিয়ে দোকানপাট খুলেছে ব্যবসায়ীরা।
আইন-শৃংখলা বাহিনী দেখলে সাটার বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নিচ্ছেন তারা, চলে গেলে পাল্লা অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করছেন দোকানীরা।
এদিকে, সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে আসা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। তবে, বাস টার্মিনাল ও হাজিরহাট এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেছে।
আরিফপুর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান জানান, জরুরী কিছু ওষুধ কিন্তু বাইরে এসেছিলাম। আতঙ্কে ছিলাম হয়তো বাধার মুখে পড়ব। কিন্তু কোথাও বাধাতো দূরের কথা দেখে মনে হচ্ছে সব যেন স্বাভাবিক। তবে শহরের ট্রাফিক মোরে মাস্ক ছাড়া মানুষ আসলেই তাকে পুলিশ মাস্ক পড়তে বাধ্য করছে।
পাবনায় কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক জানান, গ্রাম পর্যায়ে যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর না হলে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে না, ভয়াবহ পরিণতি হবে।
অপরদিকে লকডাউনে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন ও পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। তারা অযৌক্তিক কারণে বের হওয়া এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন,জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা সতর্ক করেছি, এরপরও আইন অমান্য করলে গ্রেফতার করা হবে।
কেআই//