ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘চীন বিষয়ে নিজস্ব দক্ষতা’ তৈরি করতে চায় জার্মানি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:০১ পিএম, ৬ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

জার্মানি তার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব কমাতে চীন সম্পর্কে নিজস্ব জ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করছে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জার্মানি তার বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোতে ‘চীন বিষয়ে নিজস্ব দক্ষতা’ তৈরি করতে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চলমান একটি প্রোগ্রামে ২৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। 

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য ইউরোপীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে বিজ্ঞান ও গবেষণায় সহযোগিতা করা।

শিক্ষামন্ত্রী আঞ্জা কার্লিজিক বলেছেন, ‘জার্মানি এখনো চীনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায় এবং চীনা সংস্কৃতি, ভাষা, সমাজ ও ইতিহাস বোঝে এরকম প্রতিভাবানদের চায়।’ তিনি জানান, কিন্তু এই প্রচেষ্টা জার্মানি অবশ্যই স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চাইনিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে কোর্স সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় অনুদানে পরিচালিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

আঞ্জা কার্লিজিক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের ওপর চীন সরকারের প্রভাব চাই না। আমরা কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটকে অনেক সুযোগ দিলেও চীন ও জার্মানিতে স্বতন্ত্র দক্ষতা তৈরিতে খুব কম কাজ করেছি। ২০০৬ সালে শুরুর পর জার্মানিতে ১৯টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠান ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও তথ্য ফাঁসের’ ভয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’ কিছু প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগ এনেছে। 

গোটা বিশ্বে কমপক্ষে ৫০০টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো বন্ধ করা হয়েছে বেইজিংয়ের স্বার্থ হাসিলের সন্দেহের কারণে।
সাধারণভাবে, চীন ও পশ্চিমের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হংকং ও জিনজিয়াংয়ে চীনের নীতির কারণে আরও কঠোর হয়েছে এবং ১৯৮৯ সালের তিয়ানা আনমেন স্কয়ারে অভিযান থেকে চীনা কর্মকর্তাদের উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

চীন এর জবাব দিয়েছিল ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং গবেষকদের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে দুই পক্ষের মধ্যে বিনিয়োগ চুক্তির অনুমোদন স্থগিতে প্ররোচনা দেয়। ওই চুক্তিতে জার্মান সরকার প্রধান ভূমিকা পালন করছিল।

কার্লিজিক বলেন, ‘চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এই অঞ্চলে জলবায়ু রক্ষার মতো সাধারণ আগ্রহ আমাদের রয়েছে। কিন্তু আমরা এটি অবশ্যই খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করব। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রের সঙ্গে পদ্ধতিগত প্রতিযোগিতায় রয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই প্রতিযোগিতায় সমান পদক্ষেপে প্রবেশ করব এবং প্রতিযোগিতাকে আরও মূল্যবান করতে আমরা পরস্পর কাজ করব। এ জন্য চীনের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তুলতে আমাদের কোম্পানিতে অবশ্যই পর্যাপ্ত জার্মান কর্মচারী নিশ্চিত করতে হবে যারা চীন ও এর জনগণ, ভাষা সম্পর্কে জানে।’

রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্বেও চীন ও জার্মানির মধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধন শক্তিশালী। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে টানা পাঁচ বার চীন জার্মানির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ছিল।

আইরিস সিনিয়র ফেলো ও ফরাসী থিংক ট্যাঙ্ক বার্থলমি করমন্ট বলেন, ‘পুরো ইউরোপ জুড়ে চীন বিষয়ে অধ্যায়নের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ রয়েছে এবং বেইজিংয়ের অর্থায়নে পরিচালিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যম।’

তিনি বলেন, ‘জার্মানি ও চীনের মধ্যে প্রধান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অংশীদারিত্ব বজায় থাকবে এবং সহযোগিতা সম্ভবত আরও বাড়বে। তবে ধারণাটি হলো- চীন সম্পর্কে আরও জানতে হবে তবে চীনের সাহায্য ছাড়াই।’
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

এসি