ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

প্রবোধকুমার সান্যালের জন্মদিন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ৭ জুলাই ২০২১ বুধবার

প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্যাল এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০৫ সালের ৭ জুলাই উত্তর কলকাতার চোরবাগানে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘কীর্তনীয়া’।

তাদের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরে এবং স্থায়ী নিবাস কলকাতার বালিগঞ্জে। চার বছর বয়সে পিতৃহীন হয়ে তিনি মাতুলালয়ে বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত করেন।

প্রবোধকুমার কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল ও সিটি কলেজে অধ্যয়ন করেন। কর্মজীবনে জীবিকার জন্যে নানা পেশা অবলম্বন করেছেন। ১৯২৭ সালে সেনাবাহিনীতে কেরানির কাজ নিয়ে উত্তর পশ্চিম ভারতের দুর্গম এলাকায় যান। এছাড়া ডাক বিভাগ, ছাপাখানা এমনকি মাছের ভেড়িতেও তিনি কাজ করেছেন।

প্রবোধকুমার দেশভ্রমণ পছন্দ করতেন। তিনি মানস সরোবর, কৈলাস পর্বত ও হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলসহ ছয়বার সমগ্র ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন। ভারতবর্ষ ও নেপাল ছাড়াও তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়ার বহু অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি মহাপ্রস্থানের পথে, রাশিয়ার ডায়েরী, দেবতাত্মা হিমালয় (২ খন্ড), উত্তর হিমালয় চরিত প্রভৃতি ভ্রমণকাহিনী রচনা করে বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন। ১৯৬০ সালে তিনি কলকাতায় ‘হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং ১৯৬৮ সালে হিমালয়ান ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি নরওয়ের পথে উত্তর মেরু ভ্রমণ করেন।

এছাড়াও দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে আগ্রায় এবং পরের বছর ব্রহ্মদেশে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তানে ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং পরের বছর সোভিয়েট রাশিয়ার আমন্ত্রণে তাসখন্দে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় সাহিত্য সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

প্রায় দেড়শত গ্রন্থ রচনা করে গেছেন প্রবোধকুমার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: নদ ও নদী, শ্যামলীর স্বপ্ন, উত্তর কাল, দেবতাত্মা হিমালয়, উত্তর হিমালয় চরিত, রাশিয়ার ডায়েরী, উত্তর কাল, হাসুবানু, জলকল্লোল, পরিব্রাজকের ডায়রী, পর্যটকের পত্র, বনস্পতির বৈঠক ইত্যাদি।

তার কাহিনী অবলম্বনে বহু সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কাঁচ কাটা হীরে, পুষ্পধনু, প্রিয় বান্ধবী ইত্যাদি। তার শ্রেষ্ঠ রচনা 'মহাপ্রস্থানের পথে' চলচ্চিত্রায়িত হয় ১৯৫২ সালে নিউ থিয়েটার্সের সৌজন্যে। পরিচালক ছিলেন কার্তিক চট্টোপাধ্যায়। এই সিনেমাটি হিন্দিতে 'যাত্রিক' নামে বের হয়।

তিনি সমকালীন বিজলী, কল্লোল, স্বদেশ, দুন্দুভি, পদাতিক, ফরওয়ার্ড, বাংলার কথা প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং বিজলী, স্বদেশ ও পদাতিক পত্রিকা নিজেই সম্পাদনা করতেন।

প্রবোধকুমার তার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক, শিশির কুমার পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার, শরৎ পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

একজন পর্যটকের দৃষ্টিভঙ্গি প্রবোধকুমারের উপন্যাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এজন্যে তার উপন্যাসে একক জীবন ও চরিত্র অপেক্ষা বিচিত্র জীবন ও চরিত্রের ভিড় লক্ষ করা যায়। বহু বর্ণিল জীবনকথা তিনি সরল অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। তার উপন্যাস ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ পাঠ করার পর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘তোমার ভাষা পাঠকের মনকে রাস্তায় বের করে আনে’।

লেখক ও পর্যটক প্রবোধকুমার সান্যাল ১৯৮৩ সালের ১৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র : সংগৃহীত
এসএ/