ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

জবাব দিচ্ছে ৩৫৪ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ৯ জুলাই ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ১০:১৮ এএম, ৯ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

মুজারাবানি ও তাসকিনের মধ্যে হওয়া সেই উত্তাপের চিত্র

মুজারাবানি ও তাসকিনের মধ্যে হওয়া সেই উত্তাপের চিত্র

দীর্ঘ ১৭ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে নিজের ৫০তম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অবহেলিত এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার সেরা দৃষ্টান্তমূলক দেড় শতক ও লিটন-তাসকিনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে হারারে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে কম যায়নি জিম্বাবুয়েও। মাত্র ১টি উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। যাতে এখনও ৩৫৪ রানে এগিয়ে টাইগাররা।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের প্রায় দুই সেশন খেলা রিয়াদদের এমন বড় সংগ্রহের জবাবে দারুণ শুরু করেন জিম্বাবুয়ের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। উইকেটের জন্য ২৮ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাসকিন-সাকিবদের। মোমিনুল হক বাহিনীর বোলিং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শুরুতেই ৬১ রানের জুটি গড়ে স্বাগতিকরা। 

এসময় দলের পক্ষে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফেরেন ৪১ রান করে দারুণ ছন্দে থাকা মিল্টন শুম্বা। তার ৮৩ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৭টি চারের মার।

পুরো একটা সেশনের কিছু বেশি সময় ধরে মোট ৪১টি ওভার বোলিং করে ওই একটি উইকেটই নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত বোলিং করলেও উইকেটের দেখা পাননি ব্যাট হাতে কারিশমা দেখানো তাসকিন আহমেদ। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মেডেন আদায় করেন ৬টি, রান খরচ করেন মাত্র ১৬টি- যার মধ্যে দিনের শেষ ওভারটিতেই ব্রেন্ডন টেইলর দুই চার হাঁকিয়ে আদায় করেন ১০টি রান।

অর্থাৎ প্রথম ৯ ওভারেই ৬টি মেডেন ওভার আদায় করে তাসকিন রান দেন মাত্র ৬টি। এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও উইকেট পাননি এই পেসার। তবে এতে দমে যাওয়ার পাত্র নন তাসকিন। দিনশেষে বলেছেন ধৈর্য্যের কথা। টাইগার এই পেসার জানান, ব্যাটিংয়ে যেমন ধৈর্য্য ধরে খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছি, তেমনি এমন ব্যাটিং উইকেটে ধৈর্য্যের সাথেই লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বল করলে সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

ড্রেসিংরুমে ফিরতেই উষ্ণ অভ্যার্থনা পান রেকর্ড জুটি গড়া দুই ব্যাটসম্যান

অন্যদের মধ্যে একমাত্র উইকেটটি নেয়া সাকিবও কিছুটা প্রভাব বজায় রেখে বল করতে সমর্থ হন। ১৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২টি মেডেনসহ ৪৩ রান খরচ করেন তিনি। যার মধ্যে বাউণ্ডারি খেয়েছেন পাঁচটি। এছাড়া মোমিনুলের ভান্ডারে মজুদ থাকা জেনুইন চার অস্ত্রের অপর দুই অস্ত্র মেহেদী মিরাজ কিছুটা চাপ সৃষ্টি করলেও রাহীর পরিবর্তে নেয়া পেসার এবাদত হোসাইন ছিলেন যথারীতি ম্রিয়মাণ। 

যাতে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১১৪ রান। ব্রেন্ডন টেইলর ৪৬ বলে ৩৭ রানে এবং তাকুজওয়ানাশে কাইটানো ১১৭ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ এখনও এগিয়ে আছে ৩৫৪ রানে।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বরাবরের মতোই হতাশার গান গেয়ে দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসাইন শান্ত। দুইজনই নিজেদেরকে উৎসর্গ দেন ব্লেসিং মুজারাবানিকে। অপরপ্রান্তে মাটি কামড়ে ধরে থাকার চেষ্টা করলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি সাদমান ইসলামের সে চেষ্টা। টেইলরকে ক্যাচ শিখিয়ে মাঠ ছাড়েন ৬৪ বলে ২৩ রান করে। যথারীতি ব্যর্থ হন দুই লিজেন্ড সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমও। যাতে ১০৯ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশ দলের অর্ধেকটা।

তবে এর মাঝেও অনেকটা একাই লড়াই করছিলেন অধিনায়ক মোমিনুল হক। ১৪তম ফিফটি হাঁকিয়ে ক্যাপ্টেনস নক খেলতে থাকা সৌরভ ছুটছিলেন তার দ্বাদশতম শতকের লক্ষ্যেই। তবে ভিক্টর নাইউচির শিকার হয়ে ৭০ রান করে আউট হলে শেষ হয়ে যায় সেই আশা। 

৯৪ বল মোকাবেলায় ১৩টি চার হাঁকিয়ে মোমিনুল যখন সাজঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৩২। এই অবস্থায় অধিনায়ককে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সময়ে আশার আলো হয়ে পথ দেখান লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সপ্তম উইকেটে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। ৯ম ফিফটি হাঁকিয়ে প্রথম সেঞ্চুরির আশা দেখিয়েও হতাশ করেন লিটন। কনফিডেন্ট শট খেলেও আউট হন নার্ভাস নাইন্টিজে, সাজঘরে ফেরেন মাত্র পাঁচ রানের আক্ষেপ নিয়ে। ১৪৭ বলে ৯৫ রান করে ডোনাল্ড তিরিপানোর শিকারে পরিণত হন তিনি। পরের বলেই মেহেদী হাসান মিরাজকেও সাজঘরে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের অন্যন্য সুযোগ তৈরি করেন তিরিপানো। যাতে ২৭০ রানে ৮ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

তবে তিরিপানোর সেই সুযোগটা নষ্ট করে দেন তাসকিন আহমেদ। শুধু নষ্টই করেননি, ৮টি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের লেজটা দ্রুত মুড়িয়ে দিয়ে নখ-দন্ত বের করে উল্লাস করার স্বপ্নে বিভোর জিম্বাবুয়ের বোলারদেরকে রীতিমত নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়েছেন ব্যাট হাতে আনকোরা ওই তাসকিনই। 

তাকে নিয়েই প্রথম দিনের শেষের সময়টুকু নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন রিয়াদ। তাসকিন যেভাবে শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় দিনের সকালেও সেই ধারা বজায় রাখেন। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং ও আগ্রাসী মনোভাবে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। সেইসঙ্গে রিয়াদ ও তাসকিন মিলে গড়েন ১৯১ রানের রেকর্ড গড়া এক জুটি। নবম উইকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে যে কোনও উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি।

লিটন হতাশ করলেও আট নম্বরে নেমে রিয়াদ তুলে নেন নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি। প্রায় ১৭ মাস পরে টেস্ট একাদশে ফিরেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আবারও নিজের জাত চেনালেন ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। বিদেশের মাটিতে রিয়াদের এটি তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। পঞ্চাশতম টেস্ট খেলা রিয়াদের এমন স্মরণীয় দিনে নিজেকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে ছুটছিলেন তাসকিনও।

তবে তা থেমে যায় ৭৫ রানেই। প্রায় চার ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ১৩৪টি বল মোকাবেলা করে ১১টি চার হাঁকানোর মধ্যদিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ওই ইনিংস খেলে তবেই মাঠ ছাড়েন তাসকিন। যা নিঃসন্দেহে টপ অর্ডারের জন্য শিক্ষণীয় এক ইনিংস। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এবাদত হোসাইন রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হলে ক্যারিয়ার সেরা রানে পৌঁছেই সঙ্গী হারা হন রিয়াদ। 

অপরাজিত থাকেন ১৫০ রানে। প্রায় ৭ ঘণ্টা স্থায়ী তার ২৭৮ বলের এই ধৈর্য্যশীল ইনিংসে ছিল ১৭টি চারের সঙ্গে ইনিংসের একমাত্র ছক্কার মার। যাতে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪৬৮ রান। 

জিম্বাবুয়ের পক্ষে মুজারাবানি একাই শিকার করেন ৪টি উইকেট। এছাড়া তিরিপানো ও ভিক্টর নাইউচি নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।

এনএস/