কত ভাগ দুর্নীতি করা জায়েজ!
মানিক মুনতাসির
প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ৯ জুলাই ২০২১ শুক্রবার
সরকারি বেসরকারি অফিসে ঘুষ বা উৎকোচ লেনদেন হয় দেদারছে। যদি কোনও কাজে অনিয়ম দুর্নীতি হয়, এটা প্রমাণ ছাড়া কথা বলবেন না। চোখের সামনে যা দেখবেন তা কিন্তু প্রমাণ না। তা দুর্নীতিও নয়। সেটা হলো ত্রুটি। এরপরও যদি কথা বলেন, তাহলে আপনি মামলা খেয়ে যেতে পারেন। পড়তে পারেন দলকানা কোনও দলীয় কর্মীর বদ নজরে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে স্পীড মানির ব্যবহার হয়ে থাকে, যেটা মূলত এক প্রকার ঘুষ। তবে সেটার পরিমাণ খুব কম এবং ব্যবহারও কম।
অবকাঠামো নির্মাণ, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বাংলাদেশে প্রকল্প ব্যয় অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যেমন- পদ্মাসেতুর মতো একটি প্রকল্প চীনে ১০-১২ হাজার কোটি টাকায় হয়ে যায়। আর আমাদের এখানে ৩০ হাজার কোটি টাকায়ও হয় না।
নিয়ম, অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রসঙ্গে আমরা সব সময়ই জিরো টলারেন্স। এরপরও ত্রাণের চাল, তেল, ডাল চুরি হয়। গৃহহীনদের ঘর তৈরিতেও অনিয়ম হয়। সেখানে অবশ্য দুর্নীতি হয় না। যেটা হয় সেটা হলো ত্রুটি! হ্যাঁ ত্রুটিই তো- কারণ, মাত্র দশমিক ২৫% কাজে ত্রুটি হয়েছে। অর্থাৎ এটা জায়েজ। এখানে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা তো ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। ঘর ভেঙে পড়েছে সামান্য বৃষ্টির পানির তোড়ে। এটা কিন্তু বৃষ্টি বা আবহাওয়ার দোষ! এটা নিয়ে সমালোচনার কি আছে?
তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন মন্তব্য দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে, নাকি বাঁচিয়ে দেবে- সে ব্যাপারে প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। কিন্তু আপনার সে প্রশ্ন করাটা হবে অবান্তর। কারণ, সেটার জবাব তো কেউই দেবে না! দেয়ার প্রয়োজনও মনে করবে না কেউই।
কারণ আপনি পাবলিক। আপনি কাজ করবেন, খাবেন, ঘুমাবেন। সরকারকে কর দেবেন। আর সরকারের ভালো কাজে সমর্থন দেবেন। মন্দ কাজ নীরবে মেনে নেবেন। এটাই আপনার মূল দায়িত্ব। ভোট আপনি মন চাইলে দেবেন, না চাইলে দেবেন না! আপনার ভোটে তো কারও কিছু যায় আসে না। ফলে এতো কথা বলেন কেন?
গৃহহীনদের গৃহায়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি হলেও সয়ে যাবেন আর ত্রুটি হলে সরকার আবার তা সারিয়ে দেবে। সেখানে আপনারই দেয়া করের টাকা ব্যয় করা হবে। কিন্তু আপনি এর সমালোচনা করতে পারবেন না। কারণ আপনি জনগণ। আপনি আম জনতা। আপনার কাজ হলো সয়ে যাওয়া। নীরবে সয়ে যাওয়া। পাশ দিয়ে দুর্নীতিবাজরা গলা উচিয়ে হেঁটে যাবে, আপনি তার চোখের দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাবেন। এটাই আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য।
অতএব দুর্নীতি নয়, ত্রুটিপূর্ণ কাজ করুন, সমালোচনা হবে না। জরিমানাও হবে না। ত্রুটি সরকার সারিয়ে দেবে। আপনার কোনও টেনশন, চাপ কিছুই থাকবে না। আপনি নিরাপদ, চাপমুক্ত। উত্তম। অতি উত্তম।
এনএস//