যশোরে কোরবানির ৯৬ হাজার পশু প্রস্তুত, মিলবে অনলাইনে
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:২৪ এএম, ১২ জুলাই ২০২১ সোমবার
পবিত্র ঈদুল আযহার প্রধান অনুসঙ্গ গবাদি পশু। ঈদ সামনে রেখে পশু প্রস্তুত করেছে যশোরের খামারিরা। এ বছর জেলায় ৯৬ হাজার ৩৭টি গবাদি পশু কোরবানির উপযোগী করে তোলা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় ২৪ হাজার ৩২৭টি বেশি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে লডকাউন চলমান থাকায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে শংকায় আছে খামারিরা।
তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি অ্যাপসে ৯টি হাটে বিক্রি হবে পশু। একই সাথে সংক্রমণ কমলে হাট চালু করা হবে। ফলে খামারিদের শংকা থাকবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে তথ্য মতে, এ বছরের কোরবানি সামনে রেখে যশোর জেলায় ৯৬ হাজার ৩৭টি গবাদি পশু বাজারজাতকরণের উপযোগী করা হয়েছে। পশুর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা রয়েছে ৪৪ হাজার ৫৫০টি। যার চাহিদা ছিলো ৩২ হাজার ৬৪০টি। ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৫১ হাজার ৪৮৭টি। যার চাহিদা ছিল ৩৯ হাজার ৭০টি। জেলায় মোট চাহিদা আছে ৭১ হাজার ৭১০টি পশু। সেই হিসেবে ২৪ হাজার ৩২৭ পশু উদ্বৃত্ত।
এর মধ্যে সদরে ১১ হাজার ৩৭টি, ঝিকরগাছায় ছয় হাজার ৯০৪টি, শার্শায় সাত হাজার ৫৫০টি, মণিরামপুরে ২৫ হাজার ৫৬০টি, কেশবপুরে ছয় হাজার ৭৮৫টি, অভয়নগরে পাঁচ হাজার ৩৮৩টি, বাঘারপাড়ায় সাত হাজার ৪৪৯টি ও চৌগাছায় ১৬ হাজার ১০৮টি পশু রয়েছে।
এসব পশু বিক্রির জন্য অনলাইনে ৯টি পশুরহাট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাটগুলো হচ্ছে- পশুরহাট যশোর, গট ফার্ম যশোর, পশুরহাট চৌগাছা, পশুরহাট শার্শা, পশুরহাট ঝিকরগাছা, পশুরহাট অভয়নগর, পশুরহাট মণিরামপুর, পশুরহাট কেশবপুর ও পশুরহাট বাঘারপাড়া। সহজেই পশুরহাটে প্রবেশ করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে। অ্যাপসের মধ্য দিয়ে ৯টি পশুরহাটে প্রবেশ করা যাবে।
যশোর জেলা দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন সমবায় সমিতির সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, ‘জেলায় ১৬০ জন ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাদের সবাই কোরবানিকে টার্গেট করে পশু মোটাতাজাকরণ করেছেন। এ সময় পশুর দামও ভাল পাওয়া যায়। খামারিদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। কোভিডের কারণে পশুহাট চালু করার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তাই ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে অনলাইন মার্কেট চালু করা ছাড়া কোন পথ নেই।
অনলাইন পশুহাটে পশুর বিভিন্ন ধরণের ছবি দেয়া থাকবে। ফার্মের মালিকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর থাকবে। পশু পছন্দ হলে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। মার্কেটে প্রবেশের জন্য আলাদা অ্যাপসের ব্যবস্থাও থাকবে। যার মাধ্যমে ক্রেতারা সহজেই পশুর হাটে প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে প্রত্যাশা এগ্র্যো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী তিনি। তার ফার্মে ২২টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে ১৪টি বিক্রি করার জন্য তিনি মোটাতাজাকরণ করেছেন। প্রতিটি গরুর পিছনে তার ৪০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। বাজার জমজমাট হলে এক একটি গরু তিনি ৮০ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন।
ঘোপ নওয়াপাড়া রোড ডেইরি ফার্মের স্বত্তাধিকারি অভিজিত রায় জানান, ‘তার ফার্মে ৩৮টি গরু রয়েছে। প্রতিটি গরু লাখ টাকার উপরে বিক্রি করা সম্ভব। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা তার ব্যয় হয়ে গেছে। লকডাউনে পশুহাট বন্ধ থাকলে তিনি কি করবেন চিন্তার শেষ নেই’।
বেজপাড়ার রাবেয়া ডেইরি ফার্মের স্বত্তাধিকারি রওশন আরা জানান, ‘তার ফার্মে বিক্রি করার মত ৩২টি গরু রয়েছে। আসন্ন কোরবানিকে টার্গেট করে তিনি মোটাতাজাকরণ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তিনি দুশ্চিন্তায় মধ্যে পড়ে গেছেন। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে সবাই বড় ধরণের ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন’।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ বলেন, ‘যশোরের বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে পশুহাট চালু করা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনলাইনে পশুহাট জমজমাট করার সব উদ্যোগ নেয়া হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেন বলেন, ‘যশোরে কোভিডের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে কোনভাবেই ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি এ রকম চলতে থাকলে অনলাইন পশুহাট ছাড়া খামারিদের বাঁচানোর কোন পথ নেই।’
এ প্রসঙ্গে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সব পশুহাট বন্ধ রাখা হয়েছে। লকডাউন চলমান রয়েছে। কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্ম সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে পশু বেচাকেনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সাথে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম হলে পশুহাট চালু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।
তিনি আরও বলেন, খামারিদের আতংকিত হওয়ার সুযোগ নেই। এখনও অনেক সময় আছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের কোরবানির পশু বিক্রি হবে।
এএইচ/