স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সিসি ক্যামেরা বসছে বেনাপোল বন্দরে
জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে
প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ১২ জুলাই ২০২১ সোমবার
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তায় বসছে সিসি ক্যামেরা। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো বন্দর এলাকায় ৩শ’ ৭৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
সোমবার (১২ জুলাই) সকালে বন্দরের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম পর্যায়ে মাটির নিচ দিয়ে ক্যাবল সংযোগ ও পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। স্মার্ট টেকনোলজি নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তদারকিতে প্রতিদিন অর্ধ-শতাধিক শ্রমিক এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, সিসি ক্যামেরা যেমন বন্দরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তেমনি পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে খালাস পর্যন্ত বাণিজ্য কার্যক্রম পুরোটা বন্দরের নজরদারিতে থাকবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও সিসি ক্যামেরা স্থাপনে তারা খুশি। এর আগেও বন্দরের অনেক শেডে (গুদাম) সিসি ক্যামেরা ছিল। কয়েকদিন চলার পর সেগুলো অজ্ঞাত কারণে অকেজো করে রাখা হয়। আগামীতে কি হবে সেটাই দেখার বিষয় বলছেন তারা।
দেশের স্থলপথে যে বাণিজ্য হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে ভারতের সাথে। তবে নিরাপত্তার সার্থে বেনাপোল কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই সিসি ক্যামেরার আওতায় আসলেও গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটি ছিল সিসি ক্যামেরার বাইরে। এতে বন্দর থেকে পণ্য চুরি, মাদক পাচার, রহস্যজনক অগ্নিকান্ড, চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী হত্যাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আসছিল।
এসব ঘটনায় বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ থাকলেও এতদিন কেবল প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ। অবশেষে বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। বন্দরের বাইপাস সড়ক, পণ্যগার, ভারতীয় ট্রাক ও চ্যাচিস টার্মিনাল, আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল, ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কসহ বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বসছে ৩শ’ ৭৫টি আধুনিক মানের সিসি ক্যামেরা।
বাংলাদেশ মোটরপার্টস ব্যবসায়ী সমিতি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক শাহিনুর রহমান বলেন, আমরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে বেশি পরিমাণ মোটর পার্টস আমদানি করে থাকি। বন্দর থেকে আমদানি পণ্য চুরি হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীরা এপথে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে থেকে সিসি ক্যামেরা থাকলে এমন অবস্থা হতো না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ভারতের সাথে ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। এতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অবহেলিত ছিল। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও অবশেষে সিসি ক্যামেরার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) খোরশেদ আলম জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রাথমিক অবস্থায় মাটির নিচ দিয়ে ক্যাবল ও পিলার বসানোর কাজ চলছে। ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানোর সব কাজ শেষ হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। এখন স্থাপনের কাজ চলমান। সিসি ক্যামেরা যেমন বন্দরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তেমনি পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে খালাস পর্যন্ত বাণিজ্যক কার্যক্রম পুরোটা বন্দরের নজরদারিতে থাকবে বলে জানান তিনি।
এএইচ/