জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার
জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজ জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের নজরে আসার পর থেকে এ আঞ্চলিক মহাড়কটির নির্মাণ তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
১৯৯১-৯২ সালে আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে কোরিয়ান কোম্পানীর মাধ্যমে জামালপুর-শেরপুর বনগাঁও সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। পরে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সড়কটির পুন:নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
১৩০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ে ৩২.৪০ কিমি দীর্ঘ এ সড়কটির কাজ জয়েন্ট বেঞ্চারে শুরু করে মেসার্স এসইপিএল, ওটিবিএল ও মেসার্স তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ এই ৩ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার সংবাদ প্রকাশ হলে বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির উন্নয়ন কাজ।
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের চেয়ে আরও বেশি টাকা উত্তোলন করে চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পূর্বের সড়কটির দুই পার্শে ১ মিটার করে ২ মিটার সম্প্রাসরণ কাজে দেড়ফুট বালি ও ৮ ইঞ্চি সাববেস, ৬ ইঞ্চি সাববেস-২ ধরা থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া নিম্নমানের ইট বালি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। পুরনো সড়কের মেগাডম, কার্পেটিং ও বিটুমিনাস সম্পূর্ণ উঠিয়ে ফেলে সেখানে পাথর দিয়ে ৮ ইঞ্চি (২০০ মিলি মিটার) ডব্লিবিএম করে তার উপর আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মটিার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস দিয়ে ফিনিসিং দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
বরং পুরনো সড়কের উপরের আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মিটার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস উঠিয়ে পুরনো পাথর আর কিছু নতুন পাথর দিয়ে সড়কটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। আর বছর না ঘুরতেই নতুন নির্মিত সড়কটি অনেক স্থানেই খানাখন্দক হওয়া শুরু করে।
বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় সংসদের হুইপ মো: আতিউর রহমান আতিক সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে সড়কটি তদন্তের সুপারিশ করেন। গত বছর জুলাই মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক টিম তদন্ত করে সড়কটির নির্মাণ কাজে অনিয়ম পান। ফলে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মদকে শেরপুর থেকে বদলী করে ফেনি আর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজাহারুল ইসলাম আজাদকে মেহেরপুর পাঠানো হয়।
এদিকে নিম্নমানের কাজ করায় অর্ডার বাতিল করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, এ সড়কে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। জড়িত ঠিকাদারকে কালো তালিকাভূক্ত করে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং অনিয়মের সাথে জড়িত কমকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে শেরপুরের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো: শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করেছি। এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এএইচ/