মেডিটেশন ও সুস্থ জীবন-অভ্যাস ।। বদলে দিল জীবন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২১ বুধবার
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডা. ডিন অরনিশ এ ব্যাপারে গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধান করলেন। অবশেষে ১৯৮৬ সালে ৪৮ জন হৃদরোগীকে নিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিক গবেষণা শুরু করেন। এই রোগীদের কেউই এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি করাতে রাজি ছিলেন না। এদিকে কোলেস্টেরল জমে জমে তাদের করোনারি ধমনীতে রক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। কেউ কেউ ততদিনে হার্ট অ্যাটাকেরও শিকার হয়েছেন। তাদেরকে দুটি দলে ভাগ করলেন অরনিশ। প্রথম দলে ২৮ জন আর কন্ট্রোল গ্রুপে ২০ জন।
প্রথম ২৮ জনকে নিয়ে ডিন অরনিশ নতুন কার্যক্রম হাতে নিলেন। স্বামী সচ্চিদানন্দের কাছ থেকে শেখা জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজের জীবন-অভিজ্ঞতার আলোকে অরনিশ তাদের জীবনদৃষ্টি পরিবর্তন করার শিক্ষা দিলেন। জীবন সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি শুধরে ইতিবাচক জীবনদৃষ্টি সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করলেন। খোলামেলা আলাপ- আলোচনার মধ্য দিয়ে অরনিশ তাদের একাকিত্ব, বিষণ্নতা, দুঃখ, মানসিক চাপ ও অশান্তির কারণ খুঁজে বের করলেন এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন।
অরনিশ তাদেরকে প্রতিদিন দুবেলা নিরাময়ের মেডিটেশন করতে শেখালেন। পাশাপাশি তিনি ইয়োগার কিছু আসন শেখালেন তাদের এবং ৩০ মিনিট ইয়োগা করতে বললেন। প্রাণায়াম চর্চা শেখালেন। ঘণ্টায় চার মাইল বেগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দিলেন।
অরনিশ তাদের জন্যে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করলেন। ডিমের সাদা অংশ ও চর্বিমুক্ত টক দই ছাড়া সকল প্রাণিজ আমিষ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। আর বিকল্প উদ্ভিজ্জ আমিষ হিসেবে লাল চালের ভাত/ লাল আটার রুটি ডাল মটরশুঁটি সয়াদুধ এবং সেইসাথে পর্যাপ্ত ফল সালাদ শাকসবজি ও সবুজ পাতা খেতে উদ্বুদ্ধ করলেন। তেল ছাড়া খাবার গ্রহণে তিনি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করলেন রোগীদের। এ-ছাড়া সব ধরনের ভাজাপোড়া, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ইত্যাদি ক্ষতিকর খাবার নিষিদ্ধ করলেন। এর সাথে অবশ্যই ধূমপান বর্জন।
এ কার্যক্রমের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল সপ্তাহে দুবার গ্রুপ সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং সেশন, যেখানে রোগীরা তাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক পারিপার্শ্বিক যে-কোনো সমস্যা-সংকট নিয়ে আলাপ-পরামর্শ করতেন। নিজের এমন কোনো দুঃখ হতাশা কষ্ট, যা হয়তো তিনি এতদিন কাউকে বলতে পারছিলেন না, তারা সে-সব বিষয়ে অবলীলায় অরনিশ ও অন্যান্য কাউন্সিলরদের সাথে ভাব-বিনিময় করতে লাগলেন। প্রয়োজনে অঝোরে কেঁদে বুকটাকে হালকা করতেন হৃদরোগীরা।
অন্যদিকে, কন্ট্রোল গ্রুপের ২০ জনকে আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন নির্দেশিত পথ্যবিধি ও হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসার অধীনে রাখা হলো।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া হয়েছে।
আরকে//