নতুন আশা নতুন বিশ্বাস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:১১ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১ শুক্রবার
ডা. ডিন অরনিশ উদ্ভাবিত এ চিকিৎসাপদ্ধতির সাফল্যের খবর সর্বমহলেই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। এ নিয়ে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী নিউজউইক (২৪ জুলাই ১৯৯৫) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করে ‘গোয়িং মেইনস্ট্রিম’ নিবন্ধটি। এ গবেষণা থেকে সবার কাছে একটি বার্তা পৌঁছে যায় যে, সঠিক জীবনদৃষ্টি ও সুস্থ জীবনাচার অনুসরণের মাধ্যমে করোনারি হৃদরোগ প্রতিরোধ এমনকি নিরাময়ও করা যায়।
পরিসংখ্যানভিত্তিক এ গবেষণার সমস্ত তথ্য-উপাত্ত ও সাফল্যের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওমাহার মিউচ্যুয়াল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি স্বাস্থ্যবীমার পলিসিধারী শত শত হৃদরোগীকে অরনিশের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এদের মধ্যে ২০০ জন রোগী ১৫ হাজার ডলারের এনজিওপ্লাস্টি বা ৪০ হাজার ডলারের বাইপাস সার্জারির জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বদলে অংশ নেন অরনিশের পাঁচ হাজার ডলারের ঝুঁকিমুক্ত এ জীবনধারা পরিবর্তন পদ্ধতিতে। বছরব্যাপী এ কর্মসূচিতে ছিল নিয়মিত মেডিটেশন, ইয়োগা, হাঁটা, চর্বিমুক্ত খাবার গ্রহণ এবং কাউন্সেলিং।
২০০ জন রোগীর মধ্যে ১৯০ জন একবছরের এই কর্মসূচি অনুসরণ করেন। এর মধ্যে ১৮৯ জনই সুস্থ হয়ে ওঠেন, মাত্র একজনের অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। অভাবনীয় এ সাফল্য দেখে আরো ১৫টি বীমা কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের অরনিশের কর্মসূচিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হয় ক্যালিফোর্নিয়ার সাওসালিটোতে ডা. অরনিশের কাছে। সবাই এ কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও শিখতে চান।
নেবেরেস্কার ৫০ বছর বয়সী একজন পুলিশ অফিসার ফ্রাঙ্ক সেবরন। তিনি অরনিশের কর্মসূচিতে যোগ দেন। এর আগে তার এনজিওপ্লাস্টি করা হয়েছে এবং তাকে প্রতিমাসে ২০০ ডলার ব্যয় করে বেশ কয়েকটি ওষুধ খেতে হতো। শারীরিকভাবে তিনি এতটাই দুর্বল ছিলেন যে, অল্প পরিশ্রমের কোনো ছোটখাটো কাজও করতে পারতেন না। ডা. ডিন অরনিশের একবছর মেয়াদি কার্যক্রম অনুসরণ করে তার করোনারি ধমনীতে রক্তপ্রবাহ আগের চেয়ে বাড়ল। কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমল আগের তুলনায়। দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে তিনি এমনই উদ্যম অনুভব করছিলেন যে, বাইসাইকেলে দূরপাল্লার ভ্রমণ পর্যন্ত করতে পারছিলেন।
ডা. ডিন অরনিশের গবেষণার পাশাপাশি একই সময়ে আরেকজন গবেষক হৃদরোগীদের নিয়ে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করছিলেন। আমেরিকার ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সার্জন ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইন। ডা. ডিন অরনিশ এবং ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইনের দেয়া খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পার্থক্য ছিল। ডা. অরনিশ তার রোগীদের যে খাবার খেতে দিতেন তা ছিল ‘ভেজিটেরিয়ান ডায়েট’ (প্রাণিজ আমিষের মধ্যে শুধু ডিমের সাদা অংশ ও টক দই দেয়া হয়)। সাথে বিকল্প উদ্ভিজ্জ আমিষ এবং ফল, সালাদ, সবুজ পাতা। ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইন যে খাবার দিয়েছিলেন তা ছিল ‘ভেগান ডায়েট’ (সব ধরনের প্রাণিজ আমিষ বন্ধ, সাথে বিকল্প উদ্ভিজ্জ আমিষ এবং ফল, সালাদ, সবুজ পাতা)। উভয় ক্ষেত্রেই সব খাবার ছিল তেল ছাড়া। অবশ্য তিনিও ডা. ডিন অরনিশের মতো করোনারি হৃদরোগীদের ব্লকেজ কমাতে বা রিভার্স করতে সক্ষম হন।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া হয়েছে।
আরকে//