খুবিতে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের ভাবনা
খুবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ১০:১২ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২১ রবিবার | আপডেট: ১১:২২ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২১ রবিবার
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) করোনা মহামারির কারনে স্থগিত সকল বর্ষের প্রথম টার্মের (সেমিস্টার) পরীক্ষা অনলাইনে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আজ ১৮ জুলাই রবিবার সকাল ১১টায় ডিনদের সাথে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়।
একাডেমিক ক্যালেন্ডারের মধ্যে রয়েছে, ১ থেকে ১৪ আগস্ট প্রথম টার্মের রিভিউ ক্লাস, ১৬ থেকে ৩১ আগস্ট পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর মডেল টেস্ট, ৭ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় রিভিউ ক্লাস, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক ছুটি (পি এল), ১৭ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চুড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ।
এখন এই সূচিতে শিক্ষার্থীরা কতোটুকু সন্তুষ্ট, বা শিক্ষার্থীদের ভাবনা কি এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত মতামত দেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ বলেন, এই বছরেই দুই টার্ম শেষ করতে চাই।খুবই হতাশায় ভুগছি।দ্রুত পরীক্ষা শেষ করতে চাই।কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চাই যাতে পরিবারের বোঝা না হয়ে পরিবারের পাশে দাড়াতে পারি।
অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসমিয়া জান্নাতের মতে, উচ্চশিক্ষা প্রতিটা শিক্ষার্থীর জীবনে স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কিছুটা দীর্ঘায়িত করার ফলে বাংলাদেশের একমাত্র সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আজ নাজেহাল অবস্থা। একাডেমিক কারণে বরাবরই আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে, তার উপর এমন সিদ্ধান্ত আমাদেরকে ক্যারিয়ার +মানসিক দিক থেকে আরো ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। অথোরিটির কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে যেন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দীর্ঘায়িত না করার পাশাপাশি দুই টার্মের পরীক্ষা ২০২১-এ সমাপ্ত করে এবং অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনের জন্যও বিকল্প পন্থা প্রস্তুত রাখেন।
ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আসিফ ইনজামান হৃদয় বলেন, রুটিন দেখে আমরা কেউই খুশি হতে পারিনি, অন্তত আমাদের এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ২ টার্মে’র সব পরীক্ষা শেষ হতো তাহলে সবার জন্য ভালো হতো। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ক্লাস বন্ধ, তারপর থেকে এই পর্যন্ত কোনো ক্লাস নাই,একদম বাড়িতে বসে আছি। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা চলে যাচ্ছে।এদিকে পড়াশোনা ধীরগতি ও সেশনজটে আটকে আছি আমরা।আমার মনে হয় বর্তমানে সবাই কমবেশি মোবাইল, পিসি চালাতে পারে সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য ১৬ দিন আশা করি দরকার হবেনা,সময়টা কমিয়ে আনা উচিত। আবার পি এল এর পরে দীর্ঘসময় বিরতি দিয়ে ১৭ই অক্টোবর পরিক্ষা,এই বিরতি টা না দিয়ে পি এল এর পর পর পরীক্ষা শুরু হলে ভালো হতো। সবদিক বিবেচনা করে আমার মনে হচ্ছে,একাডেমিক
ক্যালেন্ডার পুনরায় প্রণয়ন করা উচিত।
ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাক আহমেদের মতে, খুবি প্রশাসন করোনার ফলে সৃষ্ট সেশনজট কাটিয়ে উঠতে একটি সময়োপযোগী একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করতে পারেনি। এই ক্যালান্ডার সেশনজট কমাতে পারবে না,বরং বৃদ্ধি করবে। এক টার্মের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ৪ মাস নষ্ট করছে।একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি।এক্ষেত্রে প্রশাসন স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছে।প্রশিক্ষণ ও মডেল টেস্টের নামে সময়ক্ষেপণের নীতি নিয়েছে। এর জন্য এক বছরেরও অধিক সময় পেয়েও সময়ের সদ্ব্যবহার করেনি।
অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব চৌধুরী বলেন, এতোগুলো দিন প্রশিক্ষণ কর্মশালার জন্য না রেখে রিভিউ ক্লাসের ভিতরেও অনলাইন-অফলাইন পরীক্ষার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। আমাদের জীবনের একেকটি দিনের মূল্য আমরাই বুঝতে পারছি। মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে বিনীত প্রার্থনা , দয়া করে এই বছরের মধ্যেই দুইটা টার্ম শেষ করার ব্যবস্থা করেন।
স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদের মতে, আমি এই একাডেমিক ক্যালেন্ডারে মোটেই সন্তষ্ট নয়। আমি মনে করি এই বছরের মধ্যে দুইটা টার্ম হওয়া উচিত। যাতে আগামী বছর অন্তত পুরো বর্ষ ধারাবাহিক ভাবে শেষ করতে পারে। তাহলে অন্তত আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
আমাদের প্রশাসন অনেকদিন সময় পেয়েও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি, আর এখন এভাবে সময়ক্ষেপন মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়।
এভাবে যদি পরীক্ষা হয় তাহলে আমাদের ক্ষতি তো পোষাবেই না বরং আগামী বছর একি ক্ষত বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে আমি মনে করি।
আরকে//