ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৭ ১৪৩১

করোনায় তিন জেলায় মৃত্যু আরও ২২ জনের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩৪ পিএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁও জেলায় আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে তিন জেলায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ৪৫৭ জন। আমাদের মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য অনুযায়ী-

মেহেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর  রেকর্ড 
মেহেরপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ৪৯৫টি নমুনা পরীক্ষায় ওই সংখ্যক পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস। সর্বোচ্চ শনাক্তের দিনে মৃত্যুর সংখ্যাও ১১ জন। যা জেলাটিতে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। 

জেলা সিভিল সার্জন অফিসসূত্র জানায়, এদিন শনাক্তকৃতদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩ জন, গাংনীতে ৬৮ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ৩৩ জন। এ নিয়ে জেলায় বর্তমানে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০৩ জন। আর নতুন ১১ জনসহ মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। ১১৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনান্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গেল ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের জাফর উল্লাহ (৬৫), বামন পাড়ার আছেল উদ্দীন (৯৩), ফতেপুর গ্রামের রাহেলা খাতুন (৬২), চকশ্যামনগর গ্রামের মোছাঃ রাহেলা বেগম (৭০), ঝাঁঝাঁ গ্রামের সোনিয়া খাতুন (২৫), আলমপুর গ্রামের রাজিয়া খাতুন (৪৫), শহরের বাসস্ট্যান্ড পাড়ার খাদিজা বেগম (৫৫), মুজিবনগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ফরিদা খাতুন (৫০), গোপালপুর গ্রামের শাখাওয়াত হোসেন মাস্টার (৭০), গাংনী উপজেলার কুঞ্জনগর গ্রামের মালেকা খাতুন (৭৫), সিদুরকোটা গ্রামের খাদিজা খাতুন (৫৫)। 

এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় এসব মৃত্যুর হিসাব সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কেউ স্বাভাবিক মত্যুবরণ করলেও লাশ দাফনে লোকজনের উপস্থিতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। করোনা রোগী হলে তো জানাজায় অংশ নিচ্ছে না তেম্ন কেউই। সীমিত সংখ্যক মানুষজন নিয়ে দাফন সারছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, গ্রাম এলাকার অধিকাংশ রোগীই করোনাকে স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-কাশি-জ্বর মনে করছে। স্বাস্থ্য বিধিও মানছে না। রোগীর অবস্থা যখন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে তখন হাসপাতালে আনছেন। এতটাই খারাপ অবস্থায় আনছেন যে, অনেক সময় পথেই মারা যাচ্ছে। আবার যারা আসছেন, তারা নিজেরা চিকিৎসা করে শেষ অবস্থায় নিয়ে আসছেন। 

এ অবস্থায় তিনি আক্রান্ত রোগীদের আতংকিত না হয়ে শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়া মাত্রই হাসপাতালে ভর্তি করার আহ্বান জানান। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসার কোনও সমস্য নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিলিন্ডার অক্সিজেনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যারও সমাধান করে দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি দুটি হাইভোল্টেজ জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন উৎপাদনে এখন কোনও সমস্যা নেই। 

সিভিল সার্জন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বাইরে বের হলেই মাস্ক পরার আহ্বান জানান।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৪ জন ও করোনার উপসর্গে ৩ জনসহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় ৮৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ২২৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের হার শতকরা ২৫ দশমিক ৮৭ ভাগ। যা পূর্বেরদিন থেকে শূন্য দশমিক ৭৭ ভাগ কম। 

এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১২ হাজার ১৬৫ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১৯৩ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৪০৬ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, করোনার সাথে লড়াই করে ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যুর বহরে আরও ৪ জন এবং আক্রান্তের মিছিলে আরও ৭০ জন যোগ দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সিভিল সার্জনের প্রদত্ত রির্পোটে এই তথ্য প্রকাশিত হলেও অসমর্থিত কিছু সূত্র বলেছেন, রির্পোটে যুক্ত হয়নি কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতের এবং শনাক্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে।

জেলায় করোনায় মৃত্যুর বহরে নতুন যোগদানকারী আরও ৪ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৩ বছর বয়সী, বালিয়াডাঙ্গীতে ৭০ বছর বয়সী ও রাণীশংকৈলে ৫৫ বছর বয়সী তিনজন নারী এবং পীরগঞ্জে ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষ রোগী। করোনায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করে জেলায় মৃত্যুর বহরে এ পর্যন্ত মোট ১৩৭ জন যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০৩ জন নমুনা পরীক্ষা করালে নতুন করে জেলায় আরও ৭০ জন করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় তাঁরা আক্রান্তের মিছিলে যোগদান করতে বাধ্য হলেন। 
শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৩ জন, পীরগঞ্জে ১৪ জন, রাণীশংকৈলে ৭ জন, বালিয়াডাঙ্গীতে ৩ জন ও হরিপুরের ৩ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ বাসা-বাড়িতে এবং কেউ স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তের আনুপাতিক হার ৩৪ দশমিক ৪৮ ভাগ। জেলায় এপর্যন্ত মোট ৫ হাজার ২৭৭ জন শনাক্ত এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬ জন সুস্থসহ মোট ৩ হাজার ৬৬৭ জন সুস্থ হয়েছেন।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলাবাসীকে সাবধানতা অবলম্বনসহ সরকারি নির্দেশনা ও সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার।

অপরদিকে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সংকটের কথা প্রচার করে জনমনে আতংক তৈরী করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী- এমন মন্তব্য করেছেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ চপল। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনও ঘাটতি নেই। লোকজন কেন হুমড়ি খেয়ে বাইরে থেকে অক্সিজেন কিনছেন- তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি করোনায় আতঙ্ক নয়, সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। 

এনএস//