ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

মনের বাঘ : ভয় ও নেতিকথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ২০ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

কথায় বলে, ‘বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়।’ মনের বাঘে যে কীভাবে খায় বাংলার প্রাচীন উপকথাই হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জঙ্গলের মাঝে গভীর তপস্যায় নিমগ্ন এক যুবক। একাগ্রচিত্তে সে ধ্যান করে যাচ্ছে। ঈশ্বরের সন্তুষ্টি লাভে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। বৈষয়িক কোনো ব্যাপারেই এখন তার কোনো আগ্রহ নেই। জঙ্গলে হিংস্র প্রাণীর কোনো অভাব না থাকলেও তার ভয়ডর বলে কোনো কিছু ছিল না। সাধনার ফলে এই যুবক একদিন ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে। ঈশ্বর তাকে বর দেন, ‘তুমি যা ভাববে, তা-ই হবে।’

ঈশ্বরের বর পেয়ে যুবক আত্মহারা। ভাবল এই গহীন জঙ্গলে সোনার এক বিশাল প্রাসাদ হলে কেমন হয়। সাথে সাথে হলোও তা-ই। আনন্দে লাফিয়ে উঠল সে। হঠাৎ মনে হলো ক্ষুধা লেগেছে তার। ভাবল সোনার থালায় সব সুস্বাদু খাবারের কথা। সাথে সাথে সামনে হাজির। মজাদার সব খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সে। শরীর এখন একটু বিশ্রাম চাচ্ছে। সোনার পালঙ্কে গা এলিয়ে দিল। 

হঠাৎ তার মনে হলো প্রাসাদের মাঝে থাকলেও এর চারপাশে রয়েছে গহীন জঙ্গল। এখন যদি একটা বিরাট বাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলে! 

আর যায় কোথায়! যেই মনে করা ওমনি এক বিরাট বাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলল। সোনার প্রাসাদে পড়ে রইল শুধু তার কয়েক টুকরো হাড়।

এ যুবক বছরের পর বছর জঙ্গলে কাটিয়েছিল, বাঘ তার ধারে কাছেও আসে নি। কিন্তু নিরাপদ সোনার প্রাসাদেও সে মনের বাঘ থেকে রেহাই পেল না।

এ তো গেল ঈশ্বরের বর পাওয়া যুবকের কথা। বর না পেয়েও আমরা একটা ইতিবাচক কথা উচ্চারণ করে যেমন সফল হতে পারি তেমনি একটা নেতিবাচক কথা বার বার উচ্চারণ করেও বিপদ ডেকে আনতে পারি। এমনকি তামাশাচ্ছলে বার বার নেতিবাচক কথা বললেও তা ঘটে যেতে পারে। বাঘ ও রাখাল বালকের গল্পে এই কথাটিই বলা হয়েছে। 

ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছেন গল্পটি। এক রাখাল বালক 'বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে' বলে চিৎকার করে গ্রামবাসীদের জড়ো করে মজা পেত। প্রথমদিকে গ্রামবাসীরা ভাবত সত্যিই বুঝি বাঘ এসেছে। পরে তারা বালকের তামাশা বুঝতে পেরে তার কথায় কান দিত না। কিন্তু রাখাল বালক 'বাঘ এসেছে' বলে মাঝে মাঝেই চিৎকার দেয়া অব্যাহত রাখল। দেখা গেল একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ এলো এবং রাখাল বালকের প্রাণ সংহার করল। 

এই গল্পটির মাঝে প্রাকৃতিক নিয়মের এক মহাসূত্র প্রচ্ছন্ন রয়েছে। আর তা হচ্ছে-একটি নেতিবাচক কথাও যদি বার বার উচ্চারিত হয় তবে তা বাস্তবে রূপ লাভ করতে পারে। কারণ ভাবনা ও শব্দ এক প্রচণ্ড শক্তি। ভাবনা ও শব্দ শুধু বাস্তবতার বিবরণই দেয় না, বাস্তবতা সৃষ্টিও করতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনে প্রমাণ চান এ কথার? ঠিক আছে। তেঁতুল নিয়ে একটু ভাবুন না। তেঁতুলের স্বাদ কেমন, একটু কাঁচা তেঁতুলের চাটনি বা পাকা তেঁতুলের আচার পেলে কীভাবে আপনি তার স্বাদ গ্রহণ করবেন তা ভাবুন এবং পাশে বসা বন্ধু/বান্ধবীদের বলুন। দেখুন জিভে পানি এসে গেছে কিনা। বন্ধু/বান্ধবীদের জিভের অবস্থাও জিজ্ঞেস করুন। 

শুধু তেঁতুল কেন? খাবার টেবিলে বসে খাবার নিয়ে তামাশা করে দেখুন না কী প্রতিক্রিয়া হয়। নুডুলসকে বলুন, আহা! কেঁচোগুলো কেমন কিলবিল করছে। জেলিকে তুলনা করে দেখুন না জমাটবাঁধা কফ বা সর্দির সাথে! কোনো বিশেষ ভর্তাকে গোবরের সাথে, প্রতিক্রিয়া কী হয় দেখুন। 

অনেকের পক্ষে তখন এসব খাবার গ্রহণ করা হবে মুশকিল! অনেকের আসবে বমি বমি ভাব। কেউ কেউ তো বমিও করে ফেলতে পারেন। তবে একই কথায় বা একই খাবার নিয়ে তামাশা যে সবার মধ্যে একই রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তা নয়। প্রতিক্রিয়া জনে জনে হবে ভিন্ন। কিন্তু শক্ত মনোভাব না থাকলে প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়।
লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগ্রহ।
এসএ/