নেতিচিন্তার দৈহিক প্রভাব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৬ এএম, ২১ জুলাই ২০২১ বুধবার
ছোটবেলা থেকে বার বার নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে আমাদের মন-মানসিকতা এমনকি ব্রেনও সেভাবে কম্পিউটারের মতো প্রোগ্রামড (Programmed) হয়ে যায়। তখন সত্য না হওয়া সত্ত্বেও এই কথাগুলোই নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করে। এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যেমন সাধারণ ধারণা হচ্ছে, বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগে বা জ্বর আসে। বৈজ্ঞানিকভাবে বৃষ্টিতে ভেজার সাথে ঠান্ডা লাগা বা জ্বর আসার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি, ' আরে বৃষ্টিতে ভিজিসনে, সর্দি লাগবে।' শুনতে শুনতে ব্রেন এমনভাবে প্রোগ্রামড হয়ে গেছে যে, বৃষ্টির পানি গায়ে লাগার সাথে সাথে সর্দি বা ঠান্ডা লেগে যায়। বৃষ্টির পানি অনেকের কাছে রীতিমতো এলার্জিতে পরিণত হয়েছে। অথচ গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে দিনভর কাজ করছে, তাদের ঠান্ডা সর্দি লাগে না। আপনিও আজকে থেকে ভাবা শুরু করুন বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার কিছু হবে না। প্রত্যয় নিয়ে ভাবুন বৃষ্টিতে ভিজবেন। সুস্থ থাকবেন। দেখবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজেও আপনি সুস্থ থাকছেন। কারণ বৃষ্টির সাথে জ্বর বা সর্দির কোনো সম্পর্ক নেই।
শুধু অন্যের নেতিবাচক কথায় নয়, নিজের নেতিবাচক ধারণা, কথা বা চিন্তাও আপনার মনে একই ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যেমন আপনি মনে করছেন, অমুক কাজটা করতে গেলে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার কোমর ধরে যাবে বা এই ধারায় কাজ করে গেলে আমি অসুস্থ হয়ে যাব বা যা গরম পড়েছে তাতে সর্দিগর্মি না হয়েই যায় না, অথবা এতক্ষণ চুলার ধারে রান্না করছি বা দুপুরে রোদে হাঁটছি মাথাব্যথা বা মাথাধরা না হয়েই যায় না। অথবা আপনি কোনো ব্যাপার নিয়ে কারো ওপর বিরক্ত হয়েছেন। তাকে দেখলেই আপনার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, অসহ্য লাগে। আপনি ভাবছেন তাকে দেখলেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। যেই ভাবা সেই ফল। কারণ আপনার নার্ভাস সিস্টেম কখনো ভালো-মন্দ বিচার করে না। মনের নির্দেশ বা ইচ্ছা অনুসারে দেহকে কাজ করার নির্দেশ দেয়। আপনি যা ভাবছেন ব্রেন মনে করছে আপনি তা চাচ্ছেন। তাই সেজন্যে প্রয়োজনীয় দৈহিক অবস্থা সৃষ্টি করছে।
অবশ্য প্রতিটি নেতিবাচক চিন্তার সাথে সাথে যে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তা নয়। কারণ দেহের নিজস্ব একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। তা সবসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি যদি বার বার নেতিবাচক চিন্তা ও শব্দ তরঙ্গ দ্বারা এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে থাকেন, তাহলে আপনার শরীর ও জীবন সমস্যা ভারাক্রান্ত হতে সময় লাগবে না। তখন দেখা যাবে, যে অসুখের কথাই আপনি ভাবছেন, তাতেই আপনি আক্রান্ত হচ্ছেন, সে রোগের লক্ষণই আপনার শরীরে প্রকাশ পাচ্ছে। অবশ্য চিন্তা ও শব্দের শক্তি সবসময় আপনার মনের স্তর ও আবেগের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। চিন্তার ওপর আবেগের সার যত বেশি প্রয়োগ করবেন, সমস্যা তত তীব্র হবে, ফলাফলও হবে তেমন।
লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগ্রহ।
এসএ/