২৯ বছর পর জ্ঞান ফিরেই ১৩০ কোটির মালিক!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৯ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২১ রবিবার
খুবই অনিশ্চিত হলেও জীবনটা আসলে বড়ই বিচিত্র। কেউ মুহূর্তে সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে যান তো কেউ আবার বনে যান রাতারাতি কোটিপতি! আগামী দিন কার ভাগ্য কোন দিকে মোড় নেবে তা কেউই বলতে পারে না।
এমনই এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল দিল্লির এক ব্যক্তির সঙ্গে, যা প্রত্যক্ষ করেছিল সারা বিশ্ব। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে কোমায় থাকার পর সুস্থ হয়ে উঠে তিনি জানতে পেরেছিলেন ১৩০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি! কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হয়েছিল? কিছুটা বিচারবুদ্ধি এবং বাকিটা ভাগ্যের সহায়তায়।
২০১৯ সালের ঘটনা। শেয়ার বাজার সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে একাধিক অনুষ্ঠান হতো টেলিভিশন চ্যানেল-এ। তাতে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হাজির থাকতেন বিশেষজ্ঞরা। নিজের কেনা কিছু শেয়ারের বিষয়ে জানতে এমনই একটা চ্যানেলে ফোন করেছিলেন তিনি। তার পরই জানতে পারেন যে, তাঁর সেই শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য তখন ১৩০ কোটি টাকা।
দিল্লির বাসিন্দা ওই ব্যক্তি আসলে এমআরএফ-এর ওই শেয়ারগুলো কিনেছিলেন ২৯ বছর আগে, ১৯৯০ সালে। শেয়ার কেনার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর জীবনে ঘটে যায় বড় একটা দুর্ঘটনা। দিল্লির রাস্তায় মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। চিকিৎসায় প্রাণ ফিরে পেলেও তাঁকে পুরোপুরি সুস্থ করতে পারেননি চিকিৎসকরা।
কোমায় চলে যান তিনি। তারপর ঘরের একটি বিছানায় শুয়ে থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেটে যায় জীবনের ২৯টি বছর। এই ২৯ বছর ধরেই তাঁর পাশে ছিলেন সন্তানরা। তাঁর চিকিৎসায় কোনও খামতি রাখেননি তারা। এর মাঝে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছে, নাতি-নাতনিও হয়ে বড় হয়েছে।
সব মিলিয়ে ২৯ বছরে অনেক বদলে গিয়েছিল তাঁর চারপাশটা। তারপর একদিন হঠাৎই তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন। পরিবার-পরিজনদের নতুন করে চিনতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর সামনে তখন নতুন বিশ্ব। সব কিছুই যেন বদলে গিয়েছিল।
নতুন পরিবেশের সঙ্গে একটু একটু করে মানিয়েও নিলেন তিনি। নাতি রবির সঙ্গে দাদুর বেশ বোঝাপড়া হয়ে উঠেছিল। নাতির কাছেই একদিন তিনি ২৯ বছর আগের স্মৃতিগুলো এক এক করে বলে যাচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তাঁর মনে পড়ে যায় এমআরএফ-এর শেয়ারের কথা। দুর্ঘটনার ঠিক আগেই যেগুলো কিনেছিলেন তিনি।
খুব কম দামে এমআরএফ-এর ২০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু শেয়ারের কাগজপত্র কোথায় রেখেছিলেন তা মনে করতে পারছিলেন না। অতঃপর দাদু-নাতি মিলে খুঁজে বার করেছিলেন সেই কাগজপত্রগুলোও। কিন্তু এত পুরনো শেয়ার কি আদৌ এখন বিক্রি করা যাবে?
নাতি রবিই একদিন দাদুকে পাশে নিয়ে ওই টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ফোন করেন। সব ঘটনা তিনি খুলে বলেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল- এগুলো আদৌ বিক্রি করা যাবে কি না, আর গেলে কী উপায়ে সেগুলো বিক্রি করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, প্রথমে দাদুর নামে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর সেখানে এই শেয়ারগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। তবেই তিনি শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন।
এরপরই ওই টিভি অনুষ্ঠানে হাজির আর এক বিশেষজ্ঞ তাঁকে হিসাব কষে জানিয়ে দেন যে, ওই ২০ হাজার শেয়ারের বর্তমান (২০১৯ সালে) বাজার মূল্য ১৩০ কোটি টাকা!
অনুষ্ঠানের এই অংশটুকু রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওর ওই অংশটুকু নেটমাধ্যমে ঘুরতে থাকে সেই ২০১৯ সাল থেকেই। এখনও অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক কিংবা টুইটারে ভিডিওটি দেখতে পান।
যাইহোক, এরপর ওই ব্যক্তি কী করেছিলেন? টাকা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন? নাকি কোমা থেকে ফিরে ১৩০ কোটির মালিক হয়ে তাঁর ফের কোমায় যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তা অবশ্য জানা যায়নি।
এনএস//