চীনের যে সমাজে শুধু নারীদেরই রাজত্ব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৯ এএম, ২৭ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের হিমালয়ের কোলে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক এক সম্প্রদায়ের নাম মসুও। অঞ্চলটি নারী শাসিত এক অভিনব সাম্রাজ্য। ইউনান প্রদেশে পাহাড়ের কোলে মসুও সমাজে নারীরাই সর্বেসর্বা। তাদের সমাজে পুরুষরা গৌণ। এই সমাজে পুরুষের প্রয়োজন ভবিষ্যত বংশধর তৈরির জন্য। এর বাইরে পুরুষের সাথে সম্পর্ককে তাদের সমাজে নিরুৎসাহিত করা হয়।
মসুও একটি ছোট প্রাচীন সম্প্রদায়। সংখ্যায় তারা ৪০ হাজারের মত। মূলত স্বনির্ভর জাতিগোষ্ঠী। কঠোর ধর্মবিশ্বাস আর সংস্কৃতি কেন্দ্রিক তাদের জীবনযাপন। মসুও নারীরা প্রথাগত উজ্জ্বল সাজপোশাক পরে পাহাড়ের দেবীর উৎসব উদযাপন করে। তাদের বিশ্বাস এই দেবীই তাদের রক্ষাকর্ত্রী। তারা বলে, তাদের এই দেবী নাচগান ভালবাসেন, মদ্যপান, বহুগামিতা তার খুব পছন্দ। তাই এই দেবীকেই তারা অনুসরণ করে।
মসুও নারীদের বক্তব্য- ‘দেবীর মত আমাদের জীবনেও একাধিক পুরুষসঙ্গী চাই। আমরা একজনের সাথে আটকে থাকতে চাই না।’
প্রথাগতভাবে মসুওরা মাতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ তাদের বংশ পরম্পরা মায়ের দিক থেকে। তাদের সমাজে মাতামহী বা প্রমাতামহী সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। মায়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় মেয়ে। মসুও পরিবারের কন্যারা ভাই বা ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ছেলেরা কখনও বাসা ছেড়ে কোথাও যায় না। বোনের পরিবারেই থাকে।
তবে ভবিষ্যত প্রজন্মে পরিবারের মাথা কে হবে, সেটা কোন্ কন্যাসন্তান পরিবারের অগ্রজ, সেটা বিচার করে তারা ঠিক করে না। পরিবারে যে কন্যা সন্তান সবচেয়ে বুদ্ধিমতী, আর সবচেয়ে পরিশ্রমী সেই পরিবারের মাথা হয়। মেধা ও কর্মদক্ষতা বিচার করে সেটা ঠিক করে দেন পরিবারে মায়ের দিকে জীবিত সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নারী। পরিবারে সবাইকে তিনি নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দেন ভবিষ্যতে ওই পরিবার কার কর্তৃত্ব মেনে নেবে।
মসুওদের লোক সংস্কৃতিতে তাদের বিশ্বাস যে, পুরুষের ভূমিকা হল শুধু সন্তান উৎপাদনে সাহায্য করা। তাদের ব্যাখ্যায় নারীর শরীরে নতুন জীবনের যে বীজ সুপ্ত আছে, পুরুষ তাকে অঙ্কুরিত করবে। সেই বীজে যখন প্রাণের সঞ্চার হবে, তখন থেকেই সেই শিশুর মালিক তার গর্ভধারিণী মা। ওই শিশুতে কোন অধিকার নেই বাবার।
পরিবারে শিশুরা যেহেতু মায়ের বাড়িতে বেড়ে ওঠে, তাই বাবার চেয়ে তারা বেশি চেনে মামাকে। আমরা বাবা বলতে যেটা বুঝি মসুও সমাজে বাবারা কিন্তু সেরকম নয়। সন্তানের বড় হয়ে ওঠার ব্যাপারে তাদের কোনই দায়িত্ব থাকে না। সব দায়িত্ব নেন মামারা।
বোনের বাচ্চাদের মসুও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া, তাদের জীবনযাপন, মূল্যবোধ সবকিছু যথাযথভাবে শেখানোর দায়িত্ব মামাদের।
মসুওদের সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের ব্যাপারটাও একেবারেই অন্যরকম। বিয়ে বলে তাদের সমাজে কিছু নেই। নারী আর পুরুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কেও তারা বিশ্বাস করে না।
তবে, মসুও সমাজে পুরুষরা ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্মান করতে শেখে। নারীর প্রতি সম্মানবোধ নিয়ে তারা বেড়ে ওঠে। তাই বলে মসুও নারীরা কিন্তু পুরুষদের কখনই হেয় করেন না। পুরুষপ্রধান দুনিয়ায় নারীদের প্রতি যেভাবে আচরণ করে, তাদের যে চোখে দেখে, মসুও সমাজ নারীপ্রধান হলেও নারীরা কিন্তু পুরুষদের একইভাবে দেখে না। তারা পুরুষের ওপর প্রভুত্ব করে না। পুরুষদের গালমন্দ করে না। তাদের প্রতি মসুও নারীরা খুবই মমতাশীল।
বর্তমানে মসুও এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে তারা এখন চীনের আধুনিক জীবনধারার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক মসুও নারী একজন জীবনসঙ্গীর সাথে ঘর বাঁধার আইডিয়াও পছন্দ করতে শুরু করেছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ/