ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছর পূর্তি
আতাউর রহমান বিপ্লব, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১ শনিবার
দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার জীবন থেকে অর্ধ যুগ আগে মুক্তি পায় ছিটমহলবাসী। এই সুবিধা বঞ্চিতরা নাগরিকত্ব পাবার পাশাপাশি পেয়েছেন আধুনিক জীবন-যাপনের ছোঁয়া। আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়।
ঐতিহাসিক এই দিনটিকে প্রতিবছর জাকজমক পূর্ণভাবে আয়োজন করলেও এবারে চিত্রটা ভিন্ন। করোনা অতিমারীর কারণে সরকারের লকডাউন থাকায় সীমিত পরিস্বরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনটিকে উদযাপন করবে ছিটবাসী।
ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বাসিন্দাদের অন্ধকারাছন্ন বন্দি জীবন ছিল অর্ধ যুগ আগেও। ছিল না স্বাধীনভাবে জীবন যাপন, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা। আধুনিক ঘরবাড়ি তো দূরের কথা চলাচলের রাস্তাও ছিল না। পরিচয় গোপন রেখে বাংলাদেশে পড়াশুনা করেছেন অনেকেই। এমন হাজারো সমস্যায় মানবেতর জীবন কাটিয়েছে ছিটবাসীরা।
স্বাভাবিক নাগরিক জীবন ফিরে পেয়ে ছয় বছরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষের জীবন-মানের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তাদের কাছে ছিটমহল এখন শুধুই ইতিহাস ও অতীত স্মৃতি। সপ্তম বর্ষে পদার্পণে বিলুপ্ত ছিটমহলে নানা অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও সরকারের দেয়া কঠোর বিধি নিষেধের কারণে এবারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতী প্রজ্জ্বলন শেষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করবেন ছিটবাসীরা।
মাত্র ৬ বছরই দাসিয়ারছড়াসহ ১২টি ছিটমহলবাসী পেয়েছে আধুনিকতা দেখা। বাসিন্দারা পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, কমিউিনিটি ক্লিনিক, রিসোর্স সেন্টার, ব্রিজ, ড্রেন-কালভার্টসহ শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ইন্টারনেট সংযোগ। ইতোমধ্যে দেশের সর্ব প্রথম ছিটবাসিদেরকে স্মার্টকার্ড প্রদান করা হয়।
বাংলাদশে-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সাবেক সভাপতি মইনুল হক জানান, দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ছিটমহলবাসীর অন্ধকার জীবন থেকে মুক্ত হয়। ১ আগস্ট থেকে ছিটমহলের মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান। এই ৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে দাসিয়ারছড়াসহ সকল ছিটমহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রাস্তা-ঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মতো এখানেও সরকারের সকল দপ্তরের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, রাস্তাঘাট বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে করা হয়েছে। এছাড়া পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে সরকার সব ধরনের সহযেগিতা অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ একর ও সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে।
ব্যক্তি মালিকানায় খাজনা খারিজ জটিলতা থাকায় কেউ জমি বিক্রি এবং ক্রয় করতে পারছেন না। তাই জমি-সংক্রান্ত সমস্যাটি দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ/