ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

এক অস্ট্রেলিয়ার যত আবদার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৯ এএম, ৩ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

অনুশীলন শেষে এক আনন্দ আড্ডায় অজিরা

অনুশীলন শেষে এক আনন্দ আড্ডায় অজিরা

আজ (৩ আগস্ট) থেকে মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজ আয়োজনে কম বেগ পেতে হচ্ছে না বিসিবিকে। সিরিজ নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। তাদের সেসব শর্তের প্রতিটাই মেনে নিয়েছে বিসিবি। এর কিছু কিছু শর্ত যথেষ্ট অদ্ভুতও বটে। যেগুলোকে আবদার বলাও যুক্তিযুক্ত!

অজিদের এসব আবদারের কারণেই সিরিজটা পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। অস্ট্রেলিয়ার সেই সব আবদার নিয়ে চারদিকে আলোচনা সমালোচনা কম হচ্ছে না। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রেইনার রিচার্ড স্টোনিয়ার ও জাতীয় দলের কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিবাস পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার শর্তগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করে পোস্ট করেছেন।

তবে অস্ট্রেলিয়ার সব শর্ত মেনে নিয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বিসিবি কর্মকর্তারা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা তৎপর ছিলেন শুধু সিরিজটা ভালোভাবে আয়োজন করা নিয়েই। তো চলুন, এক নজরে দেখে নেয়া যাক সিরিজ শুরুর আলোচনার পর থেকে এ পর্যন্ত কি কি শর্ত দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর তার কতটুকুই বা পূরণ করতে পেরেছে বিসিবি।

আবাসিক সুবিধা
সিরিজ নিয়ে আলোচনার শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শর্ত ছিল আবাসিক সুযোগ সুবিধাগুলো নিয়ে। শর্ত ছিলো- তাদেরকে যে হোটেলে রাখা হবে, সেই হোটেলে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ পুরো হোটেলটাই তাদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার এই শর্ত মানতে গিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ২১৫টা কক্ষই ভাড়া নিয়েছে বিসিবি। তবে একই হোটেলে রাখা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও। কিন্তু এখানে তাদের দ্বিতীয় শর্ত ছিলো হোটেলের জিম ব্যবহার করার সুযোগ দিতে হবে শুধু তাদেরকেই।

অর্থাৎ স্বাগতিক ক্রিকেটাররা হোটেলের জিম ব্যবহার করার কোনও সুযোগ পাবেন না। তবে সুইমিংপুলটাই ব্যবহার করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই। সেটা অস্ট্রেলিয়া ব্যবহার করতে আগ্রহী নয় কারণেই।

ইমিগ্রেশনে ছাড়
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় শর্ত ছিলো, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তাঁদের ছাড় দিতে হবে। অতিরিক্ত ঝুঁকি এড়াতে বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না তাঁরা। অর্থ্যাৎ বিমান থেকে নেমেই সরাসরি হোটেলে চলে যাবেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার চাহিদা অনুযায়ী এই শর্তও পূরণ করেছে বিসিবি। হোটেলে এসে পাসপোর্ট জমা নিয়ে তাদের ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

মাঠ
সাধারণত তিন ম্যাচের কোনও সিরিজের দুই ম্যাচ মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ও এক ম্যাচ চট্টগ্রাম ও সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ তো পাঁচ ম্যাচের। সেক্ষেত্রে তিনটি মাঠ ব্যবহারের সুযোগ ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শর্ত ছিল, সবকটি ম্যাচ একই ভেন্যুতে আয়োজন করতে হবে। তাদের এই শর্ত পূরণ করতে গিয়েই সব ম্যাচ হচ্ছে মিরপুরে। 

ভেন্যু নিয়ে সফরকারীদের শর্ত এখানেই শেষ নয়। তারা শর্ত দিয়েছে, ম্যাচ চলাকালীন মিরপুরে জনসাধারণের প্রবেশও সীমিত করতে হবে। আরও শর্ত ছিল ম্যাচ চলাকালীন মাঠে কোনও মাঠকর্মী প্রবেশ করতে পারবে না এবং যদি বিশেষ প্রয়োজনে প্রবেশ করতে হয়, তবে পাঁচ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া বৃষ্টি নামলে ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়ার আগে মাঠকর্মীরা দল বেঁধে উইকেট ঢাকতে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না।

মাঠে পানীয় ব্যতীত অন্য কোনও খাবার আনা যাবে না- এটাও তাদের শর্তের একটা অংশ। ম্যাচ চলাকালীন মাঠে ক্যামেরা ক্রু ও সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শর্ত অনুযায়ীই। এছাড়া সিরিজ চলাকালীন বিসিবির কোনো কর্মকর্তাও স্টেডিয়ামের প্রধান গেট দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না।

কোয়ারেন্টাইন জটিলতা ও মুশফিক
অস্ট্রেলিয়ার শর্তের কারণেই ঘরের মাঠের এই সিরিজে খেলতে পারছেন না মুশফিকুর রহিম। পারিবারিক কারণে গত জিম্বাবুয়ে সফরের মাঝপথে দেশে ফিরেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। যার কারণে জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার শর্ত ছিল- জিম্বাবুয়ে সফরে যারা জৈব সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আছেন তারাই শুধু স্কোয়াডে থাকতে পারবেন।

জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে থেকে কাউকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সিরিজ শুরুর দশ দিন আগে থেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু মুশফিক কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে আবেদন করেছিল বিসিবি। বিসিবির সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে নিজেদের সিদ্বান্তেই অনঢ় থেকেছে অস্ট্রেলিয়া। কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাও।

অন্যন্য
এই সব বিষয় ছাড়াও আরও কিছু শর্ত ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তাদের শর্ত ছিল হোটেল স্টাফ থেকে শুরু করে বাসের চালক ও কর্মী এবং মাঠকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে রেখে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করাতে হবে। তাদের শর্ত অনুযায়ীই মাঠকর্মী, হোটেল স্টাফ ও বাস চালকরা জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন।

সর্বশেষ যুক্ত হয় বলের বিষয়টিও। খেলার বল গিয়ে যদি মাঠের বাইরে বা গ্যালারীতে পড়ে, তাহলে এদিনের মতো সে বল দিয়ে আর খেলা হবে না বলেই শর্ত জুড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সিএ-র সে শর্তও মেনে নিয়ে ইতোমধ্যে সব ব্যবস্থাই করে রেখেছে বিসিবি। 

বিসিবির একটি সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয় প্রটোকল মানতেই এমনটা করা হয়েছে। আগে গ্যালারিতে বল পড়লে সেটা স্যানিটাইজ করে পুন:রায় খেলা হলেও এবার কাছাকাছি মানের বল দেয়া হবে। এ জন্য ৫, ১০ বা ১৫ ওভার ব্যবহৃত বল সংগ্রহে রাখা হয়েছে। গ্যালারিতে যাওয়া বলগুলো পরের ম্যাচে আবার ব্যবহার করা হবে। এটা অস্ট্রেলিয়া দলের বাড়তি সতর্কতার জন্যই করা হবে।

এনএস//