ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

১৫ বছর রশিতে বাঁধা ভারসাম্যহীন যুবক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক চিকিৎসার অভাবে ১৫ বছর যাবত রশিতে বাঁধা। বিল্ডিংয়ে রং করার সময় ছাদ থেকে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় আব্দুল হান্নান। এরপর থেকে সে মানসিক ভারসাম্য হারান। চিকিৎসকরা বলেন তাকে উন্নত চিকিৎসা করানো হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তার উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের চন্ডিগড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল সালামের ছেলে আব্দুল হান্নান। তার চার ছেলের মধ্যে তৃতীয় হান্নান। সে মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে তার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে এলাকার রং মিস্ত্রির কাজ শিখতে থাকে। 

১৫ বছর বয়সে ২০০৭ সালে ঢাকার সি আর এলাকায় একটি বিল্ডিংয়ের রংয়ের কাজ করতে যায় আব্দুল হান্নান। সেখানে এক বিল্ডিংয়ে রং করার সময় একতলা ছাদ থেকে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। এরপর থেকে সে মানসিক ভারসাম্যহীন।

দরিদ্র কৃষক আব্দুল সালামের বসতভিটার একপাশে ছোট একটি মাটির ঘরে ১৫ বছর যাবত বসবাস করছে তারই পুত্র আব্দুল হান্নান। টিনের-চালার একটি মাটির ঘরের খুঁটির সাথে পায়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে বসে থাকে সে। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করে সে। এজন্য পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে জানান তার পরিবারের লোকজন।

ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে আছে তার বাবা-মা। সব সময় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। আব্দুল হান্নানের মা বলেন, যখন আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিবো তখন আমার এ হতভাগা ছেলেটার দেখাশুনা করবে কে? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা করার জন্য।

ঢাকায় বিভিন্ন সময়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। কোনো উন্নতি না হওয়ায় পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর অনেক চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাকে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। আব্দুল হান্নানের পিতা আব্দুল সালাম অপরের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালায়। ছেলের উন্নত চিকিৎসা কীভাবে করাবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার। অনেক কষ্ট করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলেরা কোন রকম তাদের সংসার চালায়।

বর্তমানে আর্থিক সংকটের কারণে ছেলের চিকিৎসা করানো পরিবারের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। কৃষক আব্দুল সালামের রয়েছে শুধু মাত্র ১৪ শতাংশের বসতভিটা। এই পরিবারটি সরকারি সহায়তার আশা করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান জানান, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে হান্নানের জীবন কাহিনীটি জানতে পেরেছি। সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে হান্নানের থাকার জন্য এক বান্ডিল টিন ও নগত পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, সরকারি সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে পরিবারটিকে।

এএইচ/