মোংলায় মেম্বরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ৫ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গৃহহীনদের দেয়া ঘর নিজের শাশুড়ি ও শালিকার নামে বাগিয়ে নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন প্রথমে। এরপর জেলে নয় এমন সব লোকদের জেলে কার্ড বিতরণ, পানির ট্যাঙ্কি বাবদ টাকা নেয়া এবং বিধবা কার্ড দিতেও টাকা চেয়ে বসেন তিনি। এতসব অভিযোগ মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) আব্দুল হালিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও (ইউএনও) তার এই অনিয়মের কথা জেনেছেন। তবে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তার সব অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) চিলা ইউনিয়নের চিলা বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা অনিয়মের অভিযোগে মেম্বর হালিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। এসময় পেশাদার জেলে অমল মন্ডল (৪০), রবি রায় (৩৫) ও উপল মন্ডল (৪৯) অভিযোগ করে বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চলে, জেলে কার্ডও আছে কিন্তু সরকারি ত্রাণ দেয়নি মেম্বর। তার কাছে গেলে বলে এখন না, পরেরবার দেয়া হবে। তবে জেলে নয় এমন কিছু মেম্বারের কাছের লোককে জেলে কার্ডের স্লিপ দেয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে চালও উঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
একই এলাকার তাপস রায় বলেন, তার বাবা মারা গেছেন ১৯ বছর আগে। এরমধ্যে তার মায়ের একটা বিধবা কার্ড এমনকি বয়স্ক ভাতারও কার্ড করাতে পারেননি। মেম্বর হালিমের গেছে গেলে ৩ হাজার টাকা চাওয়ায় আজও সেই কার্ড হয়নি বলে কেঁদে ফেলেন তাপস।
এদিকে বেল্লাল সর্দার ও বেলায়েত হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, মেম্বরের বিরুদ্ধে কেন বিক্ষোভ করবো না বলেন? আমরা তাকে ভোট দিয়ে মেম্বর বানিয়েছি। অথচ এই এলাকার প্রকৃত জেলে, বিধবা এবং অসহায় লোকদের কোন ত্রাণ সহযোগিতা দেয়নি। সব তার নিজের লোকদের দিয়ে দেন। সরকারি ঘর দেওয়া বাবদ তার (মেম্বর) দালাল আলম ওরফে বড়শীওয়ালা আলম এবং আনোয়ারের মাধ্যমে চিলার কলাতলা এলাকার দেব প্রসাদ মিস্ত্রি, অমর মিস্ত্রি, খোকন সর্দার ও মনিরুল সর্দারের কাছ থেকে চার হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। আজ চার বছরেও তাদের কপালে সেই ঘর মেলেনি। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন এমন অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করে বলেন, “বড়শীওয়ালা আলমের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা এরই মধ্যে ফেরত নিয়ে একজনকে দিয়েছেন। আর তার সদস্য আব্দুল হালিমের বিষয়ে বলেন, মেম্বারি করতে গেলে কিছু ভুল ত্রুটি হয়, তবে হালিম ভাল লোক।“
দুইবারের মেম্বর আব্দুল হালিম বড় কোনও দুর্নীতি করেনি বলে সাফাই গেয়ে চেয়ারম্যান আরও বলেন, “এলাকার প্রতিপক্ষ চক্র হালিমকে হেয় করতে কিছু অভিযোগ তুলছেন”।
তবে ইউপি মেম্বর আব্দুল হালিমের দাবি, তিনি কোনও অনিয়ম করেননি। নিজের শাশুড়ি ও শালিকার নামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর কিভাবে নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আত্মীয় স্বজনরা গরীব হতে পারে না? এটা উপজেলা প্রশাসন ভাল বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, “মেম্বরের আত্মীয় স্বজনের ঘর দেয়ার সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলম না, তারপরও তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব”।
এনএস//