ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে জন্ম নেয়া ছেলের নাম রাখলেন শেখ মুজিবুর রহমান

বেনাপোল প্রতিনিধি : 

প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ৫ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের হাফিজা বেগম আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন। তাই উপহারের ঘরে সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানের নাম রাখলেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। নবজাতক এই শেখ মুজিবকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো: তমিজুল ইসলাম খাঁন ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা। তাকে এক নজর দেখতে ভীড় করছেন আশে-পাশের মানুষ। বালুন্ডা গ্রামে ভূমিহীনরা মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করতে শুরু করেছেন বলে জানান উপকারভোগিরা।

বেনাপোলের পাটবাড়ি গ্রামের ছেলে আসাদুল হক (৪০)। পারিবারিক ভাবেই তার বিয়ে হয় পুটখালী ইউনিয়নের বালুন্ডা গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে হাফিজা  খাতুনের (৩০) সাথে। কিন্তু আসাদুলের বাবার পারিবারিক অসচলতার কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন। এরই মধ্যে একে একে জন্ম হয় তিন সন্তান। কিছুদিন আগে পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার হাদিউজ্জামানের সহযোগিতায় পেয়ে যান বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয় প্রকল্পের ঘর। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে নতুন ঘরে গত জুন মাসর শেষের দিকে উঠেই ২১ দিন পর জন্ম নেয় ছেলে সন্তান। ভূমিহীন এই পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মনের আনন্দে নবজাতক সন্তানের নাম রাখলেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। 

শার্শা উপজেলায় মোট ১২৭টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে বালুন্ডা গ্রামে ১০ জন উপকারভোগী পেয়েছেন  ১০টি ঘর। এই প্রকল্পের ঘর গুলোতে সুবিধা রয়েছে, রান্না ঘর, গোসলখানা, টয়লেট, বিদ্যুতের ব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বরাদ্দকৃত একটি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ। যেটা পেয়ে খুশি এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষগুলো।

হাফিজা খাতুন বলেন, স্বপ্ন ছিল ছোট একটি পরিবার, একটি সুন্দর বাড়ির। সে বাড়িতে সকলকে নিয়ে সুখে-দুঃখে বসবাস করব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, স্বামী পেলাম, ঘর পেলাম। তবে অন্যের জমি ভাঙ্গাচোরা ঘর। বাপের ঘর থেকে স্বামীর ঘরে এলাম। ঘর তো নয়, ভ্যান্না পাতার ছাওনি। একটু বৃষ্টি হলেই ঘর জুড়ে কাঁদায় ভরে যেত। একটু ঝড় বাতাস বইলেই ঘর নড়বড় করত। তাও আবার অন্যের জমিতে ঘর। অনেক আশা ছিল, গ্রামের আরো ১০ গৃহস্তের মত আমাদের একটি ঘর হবে নিজ জমিতে। স্বপ্ন দেখতাম আর ভাবতাম। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে আবার গৃহস্থ বাড়ি। এরইমধ্যে আবার আমি অন্ত:সত্বা হয়ে পড়েছিলাম। ভাবতাম এ ভাঙ্গা ঘরে আমার সন্তান রাখবো কোথায়। 

হাফিজা বেগম আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমিসহ পাকা ঘর দিয়েছে। যে আমাদের ঘর ও জমি দিচ্ছে তার বাবার নামেই আমার ছেলের নাম রাখা হয়েছে। আমার স্বপ্ন সেটা সত্যিতে পরিণত হলো। তাই তার নাম রেখেছি ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। 

বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য উপকারভোগী তানজিলা (২৫) ও সাবিনা (৫৫) বলেন, আমরা ঘর আর শেখ মুজিবুরকে পেয়ে অনেক খুশি। উপকারভোগী আব্দুর সাত্তার (৭০) বলেন, ৪টি ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি জীবনে। কোন দিন ভাবিনি পাকা ঘরে শোবো। হাসিনা আমার ঘর দেছে, ইকিনে কারেন আচে, টিউকল আচে, রান্না ঘর আছে সপ আচে। আমি হাসিনার জন্যি নামাচ পড়ি দোয়া করি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লাল্টু মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেভাবে ঘরগুলো নির্মাণ করার নির্দেশনা দিয়েছে, নকশা ঠিক রেখে আমরা সেভাবেই করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, যশোরের জেলা প্রশাসক স্যার এখানে একদিন এসেছিলেন এবং জেলা প্রশাসক স্যারই আবিষ্কার করেছেন বালুন্ডা আশ্রয়ণ প্রকল্পে একজন উপকারভোগী আছেন, যে এখানে আসার পরে তার একটি সন্তান হয়েছে। যে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ঘর দিয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা সে জন্য এই উপকারভোগীরা তার নামটা শেখ মুজিবুর রহমান দিতে বলেন। এই পরিবারসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সকলে যাতে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

আরকে//