প্রবাসে বাংলা গানের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অঞ্জলি চৌধুরী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৪৭ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:২১ এএম, ৪ আগস্ট ২০২১ বুধবার
সংগীতশিল্পী অঞ্জলি চৌধুরী
অঞ্জলি চৌধুরী। মিষ্টভাষী ও প্রতিভাবান একজন সংগীতশিল্পী। পিতা সিদ্ধেশ্বর হালদার ও মাতা লতিকা হালদার। বাবার বাড়ী বরিশাল হলেও ঢাকার ফার্মগেটে কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশর। সংস্কৃতিপ্রেমী পরিবারে বেড়ে উঠার সুবাদে অঞ্জলির সংগীত জীবনের সূচনা শৈশব থেকেই। সংগীতের প্রতি অসীম ঝোঁক দেখে তাঁর মা বাবা তাঁকে ওস্তাদ পিসি গমেজের কাছে তালিমে দিয়ে দেন। কৈশরে পদার্পণের পর তিনি উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নেন ওস্তাদ আখতার সাদমানীর কাছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বিভিন্ন রেডিওতে গান পরিবেশনের সুযোগ পান। বাংলাদেশে পড়াশোনা শেষে বহু গুণে গুণান্বিত অঞ্জলি পাড়ি জমান সুদূর আমেরিকায়। কণ্ঠে সপ্তসুরকে ধারণ করে প্রবাসেও দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে তাঁর সংগীত কার্যক্রম। তাঁর হৃদয় জুড়ে সংগীতের ঝংকার এতই ধ্বনিত হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে এসেও এক মুহূর্তের জন্যও তিনি সংগীতবিমুখ হননি। প্রবাসে উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সংগীতের তালিম নিয়েছেন ভারতের কুমকুম ভট্টাচার্যের কাছে। এছাড়া পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে বেশ কিছুদিন ভার্চুয়াল তালিম নেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত এই বাঙালী সংগীত শিল্পীর হৃদয়ে বাঙালী এতটাই গেঁথে আছে যে, তিনি তাঁর আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সন্তানদের পুরোদস্তুর বাঙালী সংস্কৃতিতে গড়ে তুলেছেন। এমনকি তাঁর কমিউনিটিতে তিনি অনেককে বাংলা শিখিয়েছেন। প্রতিবছর তিনি দেশীয় সংস্কৃতির টানে দেশে ছুটে আসেন। বিভিন্ন আঙ্গিকের সঙ্গীতে পারদর্শী শিল্পী অঞ্জলির হৃদয় বাংলা গানের মূর্ছনায় পরিপূর্ণ।
২০০৮ সালে ডক্টর অনুপ ঘোষালের পরিচালনায় কলকাতা থেকে অঞ্জলি চৌধুরীর নজরুল সঙ্গীত এবং হারানো দিনের আধুনিক বাংলা গানের দুটি অ্যালবাম প্রকাশ পায়। ঝংকারে অন্তর বীণা এবং স্মৃতিরে খুঁজিয়া ফিরি শিরোনামে দুটি একক সিডি ছাড়াও তাঁর আরো পাঁচটি মিক্সড অ্যালবামে গান রয়েছে। এছাড়াও রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর দুটি মিউজিক ভিডিও সহ নজরুল এবং কলকাতার জিৎ গাঙ্গুলির গাওয়া একটি গানের কভার সং এর মিউজিক ভিডিও আছে তার। বর্তমানে তার কিছু মৌলিক গানের অ্যালবাম এর কাজ চলছে। গানের পাশাপাশি সংস্কৃতির অন্য একটি অঙ্গনেও তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তিনি কথক নৃত্যের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এছাড়াও বর্তমানে তিনি নিয়মিত আমেরিকার লাইন ডান্স করেন। নৃত্য ও গানের পাশাপাশি অঞ্জলি ক্যালিফোর্নিয়ার সাইক্রিয়াটিক হসপিটালে কাউন্সিলর হিসেবে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। করোনাকালীন অবসরকে অঞ্জলি চৌধুরী অনন্যরূপে কাজে লাগিয়েছেন। এই অবসরে তিনি সংগীত চর্চায় আরো বেশি মনোনিবেশ করেছেন। ভার্চুয়ালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের মাধ্যমে ঘরবন্দী মানুষকে সুরের মোহনায় আমোদিত করেছেন। মানুষের মনে আশা যুগিয়েছেন।
আমেরিকায় বেড়ে ওঠা বাঙালি প্রজন্মের মধ্যে বাংলা গান ছড়িয়ে দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি গানের সুর এবং কথার মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে খুব সহজে পৌঁছাতে পারি। সুতরাং বাংলা গান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সংগীতের মুগ্ধকর কথা ও পরিবেশন জরুরি। করোনাকালীন সময়ে দেশে থাকা অবস্থায় তিনি দেশের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মেধাবী শিশুদেরকে গান ও নৃত্য শিখিয়েছেন। করোনা পরবর্তী সময়ে তিনি দেশে এসে শিখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চান।
এক জীবনে অঞ্জলির অর্জন অনেক। বিদেশি সংস্কৃতির মাঝে বাংলা গানকে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অনন্য অর্জন রয়েছে তার সাফল্যের জুড়িতে। শৈশব থেকেই স্কুল কলেজ পর্যায়ে তার রয়েছে অজস্র পুরস্কার। ২০১৭ সালে হলিউড নির্মিত দ্যা লস্ট নামক একটি শর্টফিল্মে একজন ভারতীয় নারীর চরিত্রের গানে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। এছাড়াও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্থানীয় ইংলিশ চ্যানেলে IEMP তে তিনটি বাংলা গান করেন। তিনি এবং তাঁর স্বামী ক্যালিফোর্নিয়ায় অগ্নিবীণা নামক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে শিশুদেরকে গান ও নাচ শেখানো হতো।
উল্লেখ্য, তাঁর স্বামী চিন্ময় রায় জন লেখক, সুরকার, গীতিকার এবং দক্ষ তবলা বাদক। এছাড়া তাঁর দুই কন্যা এবং একজন পুত্র সন্তান আছেন যারাও সংগীতের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকা ভুক্তি শিল্পী হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছেন।
শিল্পীরা দুঃখের আঁধার... এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পীদের জীবন বিরহময়। বিশেষ করে সংসার জীবনের সব দায়িত্ব পালন করে, মা হিসেবে সকল দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে নিজের সাধনায় যদি অটুট থাকা যায় তবে একদিন সূর্য রক্তিম আভা ছড়াবেই। বহু সংগ্রামের ফলেই আজকের এই সংগীতশিল্পী অঞ্জলি চৌধুরী যিনি প্রতিনিয়ত প্রবাসে বাংলা গানের প্রসারে কাজ করছেন। সঙ্গীতের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। বিশ্বব্যাপী বাংলা গানের দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে চান এই গুণী শিল্পী।
কেআই//এসি