বেনাপোল বন্দরে ভ্রমণ খাতে ৪২ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:১২ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২১ শনিবার
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আগের বছরের চেয়ে ভারত ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৭ জন। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভ্রমণ খাতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৫শ’ টাকা।
এদিকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক খাতে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেড় বছর ধরে চলা করোনার বিরূপ প্রভাবে নানান বিধি-নিষেধে কমেছে যাত্রীর যাতায়াত। কোভিড প্রভাব কাটলে আবার স্বাভাবিক হবে ভ্রমণ খাত।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর হয়ে প্রতিবছর চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা আর ভ্রমণে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। যা থেকে বছরে সরকারের প্রায় ১শ’ কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্বও আসে। কিন্তু গেল বছর করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশ দেশ ভারত ও বাংলাদেশে। এতে সংক্রমণ রোধে গত বছরের ১৩ মার্চ ভারত সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশিদের ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গত বছরের ১৫ আগস্ট ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে স্বল্প পরিসরে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা চালু করে ভারত।
চলতি বছরে ভারতে আবারও করোনা সংক্রমণ মহামারী অবস্থা ধারণ করলে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে আবারও যাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র মুমূর্ষ রোগীদের জন্য সীমিত পরিসরে মেডিকেল ভিসা চালু রয়েছে।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় মারাত্মক হারে কমেছে যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ রোধে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন শনিবার, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশিরা ফিরতে পারবেন ভারত থেকে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন যাওয়া যাবে ভারতে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চালু আছে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম।
আমদানিকারক সাজেদুর রহমান বলেন, স্থলপথে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। পণ্য আমদানি-রফতানি করতে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নানা বিধি-নিষেধে ইচ্ছা করলেও যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। এতে চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারেননি অনেকে। ফলে গেল অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা। তার আগের বছরও রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দীন বলেন, বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতে যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনোর নেগেটিভ সনদ প্রয়োজন হচ্ছে। যারা ভারত থেকে ফিরছেন তাদের স্থানীয় আবাসিক হোটেলে ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংক্রমণ ঝুঁকি মুক্ত হলে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে পারছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে এ পথে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিধি নিষেধে প্রতিদিন যাত্রী যাতায়াতের কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ১০০ জনের মধ্যে। যাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র আছে তারা শর্তসাপেক্ষে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, দেড় বছর ধরে চলা করোনার বিরূপ প্রভাবে নানা বিধি-নিষেধে কমেছে যাত্রী যাতায়াত। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ভারত ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৭ জন। এ সময় ভ্রমণ খাতে রাজস্ব ঘটতি হয়েছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।
এএইচ/