বার্সেলোনায় মেসির সেরা দশ মুহূর্ত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৬ এএম, ৯ আগস্ট ২০২১ সোমবার
বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির সময় শেষ। ক্লাব থেকে গতকাল অশ্রুশিক্ত বিদায় নিয়েছেন এই ফুটবল তারকা। প্রায় ২১ বছর ধরে বার্সায় ছিলেন মেসি। শৈশব-তারুণ্য কেটেছে ন্যু কাম্পের মাঠে। করেছেন ৬৭২টি গোল, ১০ বার জয় করেছেন লা লিগা শিরোপা, চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আর ছয়টা ব্যালন ডি অর।
মেসির এসব কৃতিত্ব বার্সেলোনা ভক্তদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। তবে লা লিগার নতুন নিয়মের কারণে মেসিকে রাখতে পারছে না বার্সেলোনা, সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে শোনা যাচ্ছে পিএসজির নাম।
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে লিওনেল মেসির সেরা দশটা মুহূর্ত যা মেসি ভক্তদের মনে থাকবে আজীবন-
প্রথম হ্যাটট্রিক, ২০০৭
লিওনেল মেসি তখনও কিশোর, যখন তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার মাঠে হ্যাটট্রিক করেন।
৩-৩ গোলে ড্র হয় ম্যাচটি। বার্সেলোনার হয়ে মেসি একাই গোল তিনটি করেন। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলে দিয়ে একটা দৃষ্টিনন্দন গোল করেন মেসি। এদিনই লিওনেল মেসি বার্সেলোনায় পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন সবার প্রিয়পাত্র।
সবচেয়ে সুন্দর গোল
১৪ বছর আগে কোপা দেল রে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে লিওনেল মেসি গেটাফের বিপক্ষে যে গোলটি করেন সেটিকে মনে করা হয় তার করা সেরা গোল। অনেকে মেসির স্বদেশী ডিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পান এই গোলটির। বার্সেলোনার অর্ধে বল পেয়ে একাই পাঁচজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলকিপারকে ছাড়িয়ে গোলটি করেন মেসি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্রথম গোল
একটা সময় প্রশ্ন উঠতো যে, মেসি কি ইউরোপে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে ভালো খেলতে পারবেন? সে সময় মেসি ১০ ম্যাচে ইংলিশ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একটি গোলও করতে পারেননি। কিন্তু ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে লিওনেল মেসি জবাব দেন। জাভির ক্রস থেকে মেসি রিও ফার্দিনান্দের মতো দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারের সামনে হেডে গোল দেন। এই ম্যাচটিকে লিওনেল মেসি বনাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো লড়াইও বলা হয়ে থাকে।
এর ঠিক দুই বছর পরে মেসি আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করে নিজের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মেডেল নিশ্চিত করেন।
আর্সেনালের বিপক্ষে এক ম্যাচে চার গোল
২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে মেসি রীতিমতো ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালকে নিয়ে ছেলেখেলা করেন।
মেসি পায়ের সম্মুখভাগের আলতো ছোঁয়ায় গোলকিপার ম্যানুলে অ্যালমুনিয়ার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এই ম্যাচে। এর ঠিক দুই বছর পরে জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে লিওনেল মেসি পাঁচ গোলও করেন একই ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পরে লিওনেল মেসি সর্বোচ্চ গোলদাতা।
বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভাঙলেন যেদিন
২০১২ সালে গ্রানাদার বিপক্ষে একটি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন মেসি। এই গোলের সুবাদে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই বার্সেলোনার ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলের মালিক হন লিওনেল মেসি। এর আগে সেজার রদ্রিগেজ ২৩২ গোল দিয়ে সবার ওপরে ছিলেন।
এক বছরে ৯১ গোল
লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলের বন্যার মধ্যেও একটা রেকর্ডকে মনে হয় যে এটা আর কেউই স্পর্শ করতে পারবে না। সেটা হলো ২০১২ সালে ক্যালেন্ডার বছরে ৯১টি গোল। বার্সেলোনার হয়ে এই বছর তিনি ৭৯টি গোল করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে ১২টি করেন, তাও মাত্র ৬৯টি ম্যাচ খেলে।
এ বছর লিওনেল মেসি টানা চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি অর পান। যদিও এই বছর বার্সেলোনা শুধুমাত্র কোপা ডেল রেই জিততে পারে।
২০১৪ সালে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা
লিওনেল মেসি আবারও হ্যাটট্রিক দিয়েই রেকর্ড ভাঙেন ঠিক ২ বছর পর ২০১২ সালে। এবারে লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড। এর আগে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন টেলমো জারা। মেসি এখন লা লিগায় ৪৭৪ গোলের মালিক, আগের রেকর্ডের চেয়ে ২০০ গোল বেশি। রোনালদোর চেয়ে ১৫০ গোলেরও বেশি গোলে এগিয়ে মেসি, রোনালদো অবশ্য ২০১৮ সালে লা লিগা ছেড়ে ইতালিয়ান লিগে চলে যান।
এল ক্লাসিকোতে শেষ মুহূর্তে জিতিয়ে ৫০০তম গোল
এটি সম্ভবত লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা গোল। ইনজুরি টাইমে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে স্তাদিও বার্নাব্যুতে গোলটি করেন মেসি, ঠিক ডি বক্সের কিনারা থেকে। এই গোলের পর মেসির উদযাপন ছিল মনে রাখার মতো। জার্সি খুলে বার্ন্যাবুতে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের মাঝে নিজের নাম দেখান।
২০১৭ সালের এই গোলটি এল ক্লাসিকো জয়ী গোল, এটি একই সাথে লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোল। এই গোলে বার্সেলোনা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ররিয়াল মাদ্রিদ লিগ শিরোপা জেতে।
রোনালদোকে ছাড়িয়ে ছয় নম্বর ব্যালন ডি অর জয়
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ব্যালন ডি অর জেতেন। রোনালদোর এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি অর সংখ্যা পাঁচটি। ওই মৌসুমে মেসি ৫৪টি গোল করেন।
২০১২ সালের পর মেসি ২০১৫ ও ২০১৯ সালে ব্যালন ডি অর পান। এই পুরষ্কার নেওয়ার সময় মেসি বলেন, ‘সামনে আরো সুন্দর সময় বাকি আছে আমার।’
যেবার পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন
২০২০ সালে বার্সেলোনার হয়ে নিজের শেষ মৌসুমে লিওনেল মেসি ৩৮টি গোল করেন। এর মধ্যে ৬৪৪তম গোলটি করে তিনি ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে যান। পেলে এর আগে সান্তোসের হয়ে ৬৪৩টি গোল করেন, যা একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল ছিল। লিওনেল মেসি শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ/