উচ্চ রক্তচাপ ॥ ওষুধ ছাড়াই নিরাময়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৪৬ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২১ সোমবার
কয়েক দশক ধরেই বিশ্বজুড়ে অন্যতম ঘাতক ব্যাধি—উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতাসহ জীবনঘাতী নানা রোগের সূত্রপাত করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি তিন জনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ সংখ্যা প্রতি পাঁচ জনে একজন।
রক্তচাপ : আমাদের দেহে ছড়িয়ে আছে জালিকার মতো অসংখ্য রক্তনালী— শিরা ধমনী মিলিয়ে যার দৈর্ঘ্য ৬০ হাজার মাইল। রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় এই সকল রক্তনালীর গায়ে যে চাপ পড়ে, তা-ই রক্তচাপ। এই চাপ নির্ভর করে হৃৎপিন্ডরে কর্মক্ষমতা এবং রক্তনালীর প্রতিরোধের ওপর।
রক্তচাপ মাপার পূর্বে করণীয় : কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চা-কফি না খাওয়া, ধূমপান না করা, হেঁটে বা দৌড়ে না আসা, মাপার সময় কথা না বলা, ২ মিনিট ব্যবধানে দুই হাতে দুই বার রক্তচাপ মাপা। এ-ছাড়া ভরপেট খাওয়ার পর না মাপা।
যদি কখনো কারো প্রথম চেক-আপে রক্তচাপ বেশি পাওয়া যায়, তবে তা আসলেই উচ্চ রক্তচাপ কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে কমপক্ষে বিভিন্ন সময়ে তিন বার (সম্ভব হলে ছয় বার) রক্তচাপ মেপে দেখতে হবে। যদি রক্তচাপ প্রতিবারই বেশি থাকে, তবে তা নিশ্চিতই উচ্চ রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ রোগী অনুভব করে না। চেক-আপ বা অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। তবে যে-সব উপসর্গ হতে পারে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, কাঁধব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, ক্লান্তি বোধ, অবসন্নতা, অতিরিক্ত ঘাম, অনিদ্রা, দমের সমস্যা, চোখ-মুখ অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া করা।
উচ্চ রক্তচাপের ধরন
উচ্চ রক্তচাপ মূলত দুই প্রকার :
প্রাইমারি হাইপারটেনশন (৯৫%)এটি সরাসরি জীবনাচারের সাথে সম্পর্কযুক্ত
সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন (৫%)অন্য কোনো রোগের কারণে এটি হয়ে থাকে
প্রাইমারি হাইপারটেনশনের কারণ
স্থূলতা
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ খাবার গ্রহণ
তৈলাক্ত-চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণ
রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ (চিনি, সাদা চাল, সাদা ময়দা)
রান্নায় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার এবং লবণযুক্ত অন্যান্য খাবার গ্রহণ
খাবারে পটাশিয়ামের ঘাটতি
ভিটামিনের ঘাটতি
ফাইটোকেমিক্যালের ঘাটতি
ধূমপান
অতিরিক্ত মদ্যপান
ক্রমাগত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকর প্রভাব
হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তিন গুণ বেড়ে যায়। হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়ে চার গুণ। স্ট্রোকের ঝুঁকি সাত গুণ বেড়ে যায়। আলঝেইমার্স ডিজিজ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ধমনীর ভেতর-দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সেখানে চর্বি জমতে সাহায্য করে (অ্যাথেরোস্কে¬রোসিস)। উচ্চ রক্তচাপ ক্রনিক কিডনি ডিজিজেরও কারণ।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া।
আরকে//