শৈশবে মস্তিস্কে আঘাত পরবর্তীতে বিষণ্ণতা
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ২৫ জুন ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ২৮ জুন ২০১৭ বুধবার
যে শিশুরা মস্তিষ্কে বড় ধরণের আঘাত পায় তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, ফোবিয়া এবং বিষণ্ণতার মত মানসিক প্রভাব পড়তে দেখা যায় এক দশকের বেশি সময় পরেও।
গবেষণা দলের প্রধান লেখক মাইকেল আলবিসিনি বলেন, ‘এই গবেষণায় ধারণা করা হয়েছে যে, মস্তিষ্কের আঘাত কোন না কোন দিক দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী উদ্বিগ্নতার লক্ষণের সাথে সম্পর্কিত। যদিও পূর্বে মনে করা হয়েছিল যে, মস্তিষ্কের আঘাত শুধু স্বল্পমেয়াদী প্রভাব ফেলে’।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এর মোনাশ ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স এর গবেষক আলবিসিনি বলেন, ‘মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা আঘাতের পরে দুঃশ্চিন্তায় জর্জরিত পারিবারিক পরিবেশে বাস করার মতো নানাবিধ কারণ থাকতে পারে উদ্বিগ্নতার’।
হেড ট্রমা রিহ্যাবিলিটেশন নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলবিসিনির দলটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, যে শিশুদের মধ্যম মাত্রার তীব্র ব্রেইন ইনজুরি হয় তাদের এবং নারীদের দীর্ঘমেয়াদী মানসিক প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
বাইরে থেকে কোনো শক্তি প্রয়োগ বা আঘাত করার কারণে ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি (টিবিআই) হতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্ক অকার্যকর হয়ে যেতে পারে যেমন- অচেতন হওয়া, অ্যামনেশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) বা মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যা স্ক্যানে দেখা যায়।
গবেষকেরা লিখেন যে, ছোট বেলায় টিবিআই এর অভিজ্ঞতা হয় যে শিশুদের, তাদের বড় হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী মানসিক প্রভাবে ভোগার বিষয়টি পুরোপুরি বোঝার জন্য আরো অনেক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
নিউজিল্যান্ডের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া তরুণদেরকে কিছু প্রশ্ন করেন তারা, যারা মারাত্মক মস্তিষ্কের আঘাত পেয়েছিল ৫ বা ১০ বছর আগে, যখন তাদের বয়স ছিল ১৮ বছরের কম। তুলনা করার জন্য গবেষকেরা আরো একটি তরুণদের ছোট্ট দলকে পর্যবেক্ষণ করেন যাদের ছোটবেলায় হাত বা পা ভাঙার মত অর্থোপেডিক ইনজুরি হয়েছিল এবং এর জন্য তারা চিকিৎসা নিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের মস্তিষ্কের আঘাতের কোনো ইতিহাস ছিল না।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটা মানুষকে সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলতে হয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া এবং ডিপ্রেশন নির্ণয়ের জন্য। ব্রেইন ইনজুরি হয়নি এমন মানুষদের তুলনায় যাদের টিবিআই হয়েছে এমন মানুষদের উদ্বিগ্নতার সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি ৫ গুণ বেশি হয়।
পূর্বে ব্রেইন ইনজুরি হয়েছিল এমন মানুষদের প্যানিক অ্যাটাক, নির্দিষ্টভাবে ফোবিয়া এবং ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।
মধ্যম-তীব্র মাত্রার ব্রেইন ইনজুরি হয়েছিলো যাদের তাদের উদ্বিগ্নতার হার সার্বিকভাবেই বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মাল্টিপল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারে ভোগার সম্ভাবনা থাকে।
গবেষকদের মতে, পুরুষের তুলনায় নারীদের অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডারে ভোগার সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি ছিল, তাদের মস্তিষ্কের আঘাত থাকুক বা না থাকুক।
সান ডিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক ডা. জেফ্রি ম্যাক্স যিনি এই গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তিনি বলেন, এই ফলাফলে এটাই গুরুত্ব আরোপ করে যে, টিবিআই হওয়ার পরে শিশু ও কিশোরদের পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন তাদের উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটির সমস্যা হয় কিনা দেখার জন্য। সূত্র: হাফিংটন পোষ্ট