ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বাস্তবায়নের পথে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন (ভিডিও)

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ১০ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

ঘাতকের বুলেট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণটাই শুধু নিতে পেরেছে। মুছে ফেলতে পারেনি তাঁর আদর্শ। সোনার বাংলা গড়ার জাতির পিতার সেই আমৃত্য স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। যদিও আজকের অবস্থানে আসার কাজটি সহজ ছিল না। দেশকে ফেরাতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়; বঙ্গবন্ধুর দর্শনে।

একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি। অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়। সবখানেই হানাদারদের ভয়াল থাবা। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭২ সালে অনেকটা শূন্য থেকেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

কল-কারখানা নতুন করে চালু, ভেঙ্গে পড়া অবকাঠামা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার, জাতীয় সম্পদে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অর্থনৈতিক দর্শনে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট থামিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সেই প্রচেষ্টা। 

চলতে থাকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের শাসন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরানোর সংগ্রাম শুরু করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে আওয়ামী লীগ। তবে দেশি-বিদেশি নানা কূটকৌশলে তাঁকে পরের নির্বাচনে জিততে দেয়া হয়নি।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের জনতার নিরঙ্কুশ রায়ে আবারও বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। পরের দুটি নির্বাচনে জিতে টানা বারো বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করছেন শেখ হাসিনা। 

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, দিন বদল শুরু হয়েছিল ২০০৯-এ তিনি যখন পুনরায় ক্ষমতায় আসেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত একযুগে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৮-৯ অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপি যেখানে ছিল ৯১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩০ বিলিয়ন ডলারে। রেমিটেন্স ৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, একইভাবে গত এক দশকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৪৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে এবং মাথাপিছু গড় আয় ৭০৩ ডলার থেকে ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নিত হয়েছে।

আর্থসামাজিক খাতেও গত বারো বছরে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন চরম বিদ্যুৎ সংকটে দেশ। উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। আর ৩২শ’ থেকে ৩৩শ’ মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করতো দৈনিক উৎপাদন। তবে মাত্র বারো বছরে বদলে গেছে চিত্র। উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। ২০২৫ সাল নাগাদ ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। 

এদিকে, ২০০৯ সালে মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল। ২০২১ সালে এসে তা ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়।

গত একযুগে সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বস্বীকৃত। কমেছে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার। গ্রামীণ জনপদে পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি নিশ্চিত হয়েছে। কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে সেবা পাচ্ছেন মানুষ। আর এসব কারণে মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে ৬৬ বছর ৮ মাস থেকে দেশের মানুষের গড় আয়ু উন্নীত হয়েছে ৭২ বছর ৮ মাসে।
 
এদিকে, শেখ হাসিনার শাসনামলের কৃষিতেও বড় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে দ্বিতীয়স্থানে। আর ইন্দোনেশিয়াকে টপকে তৃতীয় শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশ এখন বাংলাদেশ।
   
অবকাঠামাগত উন্নয়নও এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। প্রমত্তা পদ্মায় জেগেছে সেতু, ঢাকার বুকে মেট্রোরেল, রূপপুরে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বাঁশাখালী, রামপাল, পায়রায় বড় বড় বিদ্যুৎ প্লান্ট, এলিভিয়েটেড এক্সপেসওয়ে, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগুচ্ছে। 
  
তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। তাই লক্ষ্য পূরণে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখানোর স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে গতি থাকা দরকার, যে পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া লাগছে সেগুলো আমরা নিয়েছি।

আগামী একশ’ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করা অসাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেই কেবল ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মত বিশ্লেষকদের।

ভিডিও-

এএইচ/