বঙ্গবন্ধুর সহচর শহীদ সুরত আলী দারোগার শাহাদাতবার্ষিকী পালিত
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:২৮ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২১ রবিবার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম রাজনৈতিক সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ সুরত আলী দারোগার ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদেরকে স্মরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে আজ রোববার তাঁর জন্মস্থান নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমাইর শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শহীদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, স্মৃতিচারণ সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শহীদ সুরত আলী দারোগা স্মৃতি পরিষদ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় উপজেলার সামাজিক সংগঠন অদম্য নজিপুর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্মাণাধীন প্রামাণ্য চলচিত্র ‘নওগাঁ-১৯৭১’-এর নির্মাতা সংগঠন ধূমকেতু চলচিত্র পরিষদ একাত্মতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
শহীদ সুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মেহমুদ রাসেলের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন একুশে পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, ডাসনগর মলংশাহ মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সোবহান সরকার, সাংবাদিক ওমর ফারুক, রায়হান রেজা চৌধুরী, ধূমকেতু চলচিত্র পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচিত্র নওগাঁ-১৯৭১' এর পরিচালক নাসরুল্লাহ রাসু প্রমুখ।
স্মৃতিচারণ সভায় বক্তারা বলেন, ১৮৯৩ সালে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ডাশনগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুরত আলী। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক স্কুলে পড়া লেখা শেষ করে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯০৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১২ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেন। পড়ালেখা শেষে পুলিশে যোগ দেন সুরত আলী। চাকরি জীবনে বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপ-পরিদর্শক পদে চাকরি করেছেন তিনি।
১৯৫০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগে যোগ দেন তিনি। পরে তিনি ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন।
একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার ভূমিকা পালন করায় একাত্তরের ১৫ আগস্ট স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে সুরত আলী দারোগাকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। পাক সেনারা তার গ্রামের সুবিশাল মাটির তৈরি বাড়িটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর বর্বর পাকবাহিনী মহাদেবপুর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তার উপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। এর একপর্যায় ২২ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকবাহিনী।
পরে তাঁর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় আত্রাই নদীতে। তাঁর লাশের সন্ধান আজও পায়নি স্বজনরা।
গ্রামে ১৯১৪ সালে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে পরে ১৯১৮ সালে শহীদ সুরত আলীর নামে নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচরকে অনতিবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা প্রদানসহ তাঁর স্মৃতি রক্ষার দাবি জানান বক্তারা।
এএইচ/