ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ফ্যাবুলাস ফাওয়াদে চালকের আসনে পাকিস্তান

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১১:০৭ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২১ সোমবার | আপডেট: ১১:১৭ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২১ সোমবার

ক্যারিয়ারের ৫ম শতক হাঁকানোর পর ফাওয়াদের উদযাপন

ক্যারিয়ারের ৫ম শতক হাঁকানোর পর ফাওয়াদের উদযাপন

২৪ বছর বয়সে অভিষেক হলেও ১২ বছরের ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ১৩টি! অবাক করে দেয়া তথ্যই বটে। কারণ মাঝে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রায় ১১ বছর পর পাকিস্তানের সাদা জার্সিতে ফিরে ব্যাট হাতে রীতিমত মুগ্ধতা ছড়িয়েই চলেছেন ছত্রিশের ফাওয়াদ আলম। চলমান ক্যারিবীয় সফরের প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকানোর পর দ্বিতীয় টেস্টেও আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন ৩৫ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম দিনে বাবর আজমকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানকে চরম বিপর্যয় থেকে টেনে তোলেন ফাওয়াদ। টসে হেরে ব্যাটিং নেমে মাত্র ২ রানেই ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়ায় চতুর্থ উইকেটে ফাওয়াদ-বাবরের অনবদ্য ১৫৮ রানের জুটিতে।

অবশ্য দলীয় ১৬০ রানের মাথায় ক্রাম্পের ইনজুরিতে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আলম। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ১৪৯ বল মোকাবেলায় হার না মানা ৭৬ রান করেন তিনি, ১১টি চারের সাহায্যে। পরবর্তীতে বাবরও ৭৫ রান করে ফিরলে ৪ উইকেটে ২১২ রানে প্রথম দিন শেষ করে পাকিস্তান। 

তবে বৃষ্টিতে ভেসে যায় দ্বিতীয় দিনের পুরোটা খেলাই। এর আগে প্রকৃতির বাধায় প্রথম দিনে খেলা হয়েছিল ৭৪ ওভার। বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনেও খেলা হয় সাকুল্যে ৫৪ ওভার। এটুকু সময়েই কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায় পাকিস্তান।

তৃতীয় দিনে বাবর আজমরা তাদের প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ৯ উইকেটে ৩০২ রান তুলে। প্রথম দিনেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ফাওয়াদ আলম পুনরায় ব্যাট করতে নেমে পূর্ণ করেন ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতরান। আগের দিন চোট পয়ে মাঠ ছাড়লেও এদিন আর ক্রিজ ছাড়েননি বাঁহাতি এই টেস্ট স্পেশালিষ্ট। তাকে এদিন পরাস্তই করতে পারেননি ক্যারীবিয়দের কেউই। 

২১৩ বল মোকাবেলায় ১৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ফাওয়াদ। এছাড়া প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের হয়ে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন ক্যাপ্টেন বাবর। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৩১, ফাহীম আশরাফ ২৬ ও শাহিন আফ্রিদি খেলেন ১৯ রানের সংক্ষিপ্ত ইনিংস।

মূলত ফাওয়াদ আলমের অনবদ্য ওই শতকে ভর করেই তিনশ রানের সম্মানজনক স্কোর পায় পাকিস্তান। আর এটি তাঁর ১৩ টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। এই সিরিজের আগে চারটি শতক হাঁকানো ফাওয়াদের ক্যারিয়ারে ফিফটি ছিলনা একটিও। কারণ, আগের ১১ টেস্টে যে চারবার তিনি ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন, প্রতিবারই দেখা পান শতকের। 

ব্যতিক্রম ঘটল এবারের এই ক্যারিবীয় সফরে। এই সফরেই ফাওয়াদ তাঁর নামের পাশে অন্তত একটি অর্ধশতক লিখতে সমর্থ হন। আর তাঁর পরের ইনিংসটা তো এক মহাকাব্য। মাত্র ২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলের হাল ধরে ফিফটি হাঁকিয়ে যখনই আরেকটি শত রানের লক্ষ্যে ছুটছিলেন, তখন আঘাত পান পায়ে। যার ফলে বাধ্য হন মাঠ ছেড়ে যেতে। পরে আবারও দলের বিপর্জয়ে নেমে বুক চিতিয়ে লড়াই করে তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। শুধু তা-ই নয়, সবাই আউট হয়ে ফিরলেও তাকে ফেরাতে ব্যর্থ হন উইন্ডিজের বোলাররা।

সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের ন্যায় ফাওয়াদ আলমের এমন অনবদ্য পারফরম্যান্স মন ছুঁয়ে গেছে পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতারকেও। ফাওয়াদকে ‘জিনিয়াস’ আখ্যা দিয়ে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। টুপি খোলা সালামও জানিয়েছেন শোয়েব।

সাবেক এই স্পীডস্টার বলেন, ‌‘ফাওয়াদ আলম একজন দুর্দান্ত মেধাবী ব্যক্তিত্ব। তিনি টিভিতে অভিনয় করেছেন, ক্রিকেট খেলেছেন এবং নাটকেও অভিনয় করেছেন। তবে সবসময়ই তিনি তার ভালো পারফর্মেন্স বজায় রেখেছেন। ১১ বছর দলের বাইরে থাকা সত্ত্বেও, তিনি নিজের সবটা উজাড় করে পাকিস্তানের হয়ে খেলেন। তাকে টুপি খোলা সালাম।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৩টি করে উইকেট নেন কেমার রোচ ও জাইডেন সিলস। ২টি উইকেট নিয়েছেন জেসন হোল্ডার।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ক্যারিবীয়রা। তৃতীয় দিনের শেষে তারা ৩৯ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। দুই ওপেনার ব্রাথওয়েট ও পাওয়েল যথাক্রমে ৪ ও ৫ রান করে আফ্রিদির শিকার হন। রোস্টন চেজ ফেরেন ১০ রান করে আশরাফের শিকার হয়ে। বোনার অপরাজিত আছেন ১৮ রান করে, ১৬ বল খেলে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা আলজারি জোসেফ। 

আজ চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নামবেন এই দুজন। এই টেস্ট ড্র করে বাঁ জিতে স্বাগতিকরা কি পারবেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ বছরের খরা ঘোচাতে? নাকি জিতে অজেয়ই থেকে যাবে পাকিস্তান! অবশ্য এই টেস্টে জয় পাওয়াটা পাকিস্তানের জন্য কঠিনই বটে। কেননা, ম্যাচের বাকী আছে মাত্র দুটি দিন, অথচ এখনও প্রথম ইনিংসই ক্লোজ করতে পারেনি উইন্ডিজ।

আজ চতুর্থ দিনের শুরুতেই আঘাত হেনে ক্যারিবীয়দের যদি লাঞ্চের আগেই গুটিয়ে দিতে পারে, তাহলে একটা দারুণ সুযোগ তৈরী হবে সফরকারীদের জন্য। অন্যথায় ড্র হলে ২১ বছরের শাপমোচন করবে উইন্ডিজ। তবে যাই হোক না কেন, ফলাফলের জন্য অপেক্ষাটা করতেই হচ্ছে।

এনএস//