শার্শায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে অভাবনীয় সাফল্য
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৩:১২ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২১ বুধবার
গ্রীষ্মকালীন শিম এবং টমেটো চাষে সাফল্যের মুখ দেখছেন যশোরের শার্শার চাষিরা। অসময়ে শীত মৌসুমের ফসলের বাম্বার ফলনে কৃষকেরা যেন সোনার হরিণ হাতে পেয়েছেন। অল্প জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করে অধিক মুনাফা লাভে তাদের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি।
শার্শা উপজেলায় পলি শেড আর নিচে বেড করে টমেটোর চাষ হচ্ছে। বাঁশের তৈরি মাঁচায় ঝুলছে শিমের থোকা থোকা ফুল। ভাল ফলন এবং বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদার পাশাপাশি দাম বেশি পাওয়ায় অধিক লাভের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা।
উপজেলার শ্যামলাগাছি, নারায়ণপুর, কাশিপুর গ্রামের মাঠে মাঠে গ্রীষ্মকালীন শিম ও টমেটোর চাষ হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গ্রীষ্মকালীন এই চাষে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। বেগুনি আর হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষকের মন।
গত সপ্তাহে বেনাপোল এবং নাভারনের কাঁচা বাজারে প্রতি কেজি শিম ৭৫-৮০ টাকা এবং টমেটো ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
শার্শার ডিহি ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের শিম চাষি রহমান মিয়া জানান, প্রতি বিঘা শিম চাষে খরচ দাঁড়ায় প্রায় লাখ টাকা, টমেটোর বিঘা প্রতি খরচ একটু বেশি হলেও বাজারে ভাল দাম থাকায় খরচের দ্বিগুণ লাভ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বেনাপোলের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আবেদিন জানায়, বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করে গত বছর এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ করেন তিনি।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার বলেন, যশোর অঞ্চলে চাষিদের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের আগ্রহ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করে নতুন নতুন সবজি উদ্ভাবনে চাষিরা এগিয়ে আসার কারণে প্রতিবছর নতুন নতুন এলাকায় গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন চাষিরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে অসময়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন সবজি।
এ বছর শার্শা উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে ২৭ একর জমিতে শিম এবং ৩১ একর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল কম। আগামী বছর অধিক পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠবেন এই আশা প্রকাশ করেন কৃষি কর্মকর্তা সৌতম।
এদিকে, কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টমেটো পুষ্টিগুণে ভরা এক ধরনের সালাদ সবজি। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি’র অন্যতম উৎসও বটে। এছাড়া এতে আছে বেটা কেরোটিন নামক এক প্রকার ভিটামিন যা রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। আরও আছে আমিষ, শর্করা, খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ভেষজ গুণসমৃদ্ধ টমেটোতে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। দৈনিক একটি করে টমেটো খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৬০ ভাগ কমে যায়।
শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কার্তিকের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) পর্যন্ত বীজতলায় বপনের উপযুক্ত সময়। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই টমেটো চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ (নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
তবে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২০-২৫ দিনের চারা লাগানো যায়। জমি চাষ সম্পন্ন হলে ভূমি হতে ১০-১৫ সেমি উঁচু বেড তৈরি করে বেডের চারপাশে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং চারা হতে চারার দূরত্ব হবে ৫০ সেমি।
বাহার, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, বারি টে টো-২ বা রতন, বারি টমেটো-৩, ৪, হাইব্রিড এর মধ্যে সবল, মিন্টু, বারি টমেটো-৫ খুব ভাল ফলাফল দিচ্ছে। জাতভেদে চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ শুরু করা যায়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছ থেকে সাত থেকে আটবার টমেটো সংগ্রহ করা যায়। ফলের নিচের দিকে একটু লালচে ভাব দেখা দিলে ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
জাতভেদে টমেটোর ফলন শতাংশে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
এএইচ/