ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছে হটলাইন ‘৩৩৩’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪২ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২১ বুধবার

ফরিদা হকের বয়স ৭২ বছর। হঠাৎ করে তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে দাঁড়ায়। প্রচন্ড এই জ্বরের সঙ্গে আবার হালকা কাশি এবং মাথাব্যথা। এমন অবস্থায় একমাত্র মেয়ে রুমা তার বিধবা মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ চিন্তিত।

কলেজ ছাত্রী রুমা ধারণা হয় যে তার মায়েরও হয়তো অনেকের মতো কোভিড-১৯ এর লক্ষণ বিদ্যমান। সেটাই তার উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে দ্রুত এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চান।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশব্যাপী লকডাউন দেয়া হয়েছিল। এসময় হাসপাতালগুলোতেও ছিল প্রচন্ড ভিড়। সেখানে রোগীর চাপের তুলনায় চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল। তখন হাসপাতালগুলোতে ক্তারী সেবা অতটা সহজলভ্য ছিল না। এছাড়া, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকিতো রয়েছেই।

‘তারিখটা ছিল ২০২১ সালের ২৬ জুলাই। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১০টা ২৩ মিনিট। আমি ‘৩৩৩’ কল সেন্টারে  ফোন দিয়ে একটু অভিভূতই হলাম। প্রথমবারের চেষ্টাতেই ফোনে সংযোগ পেলাম। কল সেন্টারের একজন এজেন্ট আমার লাইনটি ‘ডাক্তার পুল বিডি’র একজন নিবন্ধিত চিকিৎসককে ধরিয়ে দিলেন। আমার মায়ের কথা তাকে জানালাম। ডাক্তার মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলেন এবং ওষুধ লিখে দিলেন,’ সম্প্রতি গণামাধ্যমকে এমনটাই বললেন রুমা।

পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার মৌকরণ গ্রামের বাসিন্দা রুমা সন্তুষ্টির সুরে জানালেন, সব শুনে ডাক্তার অবশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আমার মা সম্ভবত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি। ফলে, তিনি তাকে জ্বরের জন্য ওষুধ লিখে দিয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরামর্শ দিলেন।

‘ডাক্তার বললেন, আমার মা যদি আরও কোন জটিলতার মুখোমুখি হয় তাহলে যেন আবার ’৩৩৩’ এ ডায়াল করি। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি আমাকে প্রেসক্রিপশন পাঠালেন,’ বললেন রুমা। তিনি জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে তার মায়ের অবস্থার উন্নতি হয়।

‘টেলিমেডিসিন পরিষেবা খুবই সহায়ক,’ উল্লেখ করে রুমা বলেন, প্রয়োজন হলে সবারই এই চিকিৎসা পরামর্শের সেবাটি গ্রহণ করা উচিত।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. সাফিউল ইসলামকে তার বাবাকে নিয়ে প্রায় একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার ৭০ বছর বয়সী বাবা একজন ডায়াবেটিস  রোগী। তিনি দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন।

‘জ্বর এবং হাত-পায়ে জয়েন্টে ব্যথা। বাবার অসুস্থতা দেখে আমি সত্যিই অসহায় বোধ করছিলাম। বিষয়টা বন্ধু রবিনকে জানালাম। সে আমাকে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে ’৩৩৩’ নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দেয়। কারণ, কোনো হাসপাতালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা নেয়া খুবই কঠিন ছিল,’ বলেন সাফিউল।

হটলাইনে একজন মহিলা ডাক্তারের সাথে সংযোগ পেলেন। তাকে বাবার স্বাস্থ্যের অবস্থা বর্ণনা করলেন। ডাক্তার সমস্যা শুনলেন। তার পর বাবার জন্য কিছু ওষুধের নাম লিখতে বললেন। তিনি বলেন, ‘আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু সঠিকভাবে করেছি। আল্লাহর রহমতে আট দিনেই বাবা অনেকটা সুস্থ হলেন।’

‘৩৩৩’ হলো একটি জনসেবা হটলাইন যা ‘জাতীয় হেল্পলাইন’ নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রনালয়ের এট্আুই প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত। এর লক্ষ্য হচ্ছে জনসেবা গ্রহণের পদ্ধতি এবং সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় তথ্য প্রচার করা। এটি তৈরি করা হয়েছিল কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাডাতে এবং বাড়িতে বসেই সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়ার জন্য। শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত চিকিৎসকরাই এখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি কথা হলো বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জন ডাক্তার মনিরুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক রোগীকে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়েছি, তাদের বেশিরভাগই ছির করোনা রোগী।’

‘একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে, আমি সরাসরি এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং সেবা দান করে মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করি,’ দু’বার করোনায় আক্রান্ত এই চিকিৎসক  যোগ করলেন।

ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের একজন ডা. পলাশ কুমার রায় এখন রংপুর সিটি কর্পোরেশনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১১,৬০০ এর অধিক মানুষকে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়েছেন।

‘একজন ইতালীয়, যিনি বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে কাজ করেন, তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ‘৩৩৩’ হটলাইনে কল করেন। আমি তাকে চিকিৎসা সেবা দেই,’ তিনি বলেন।

ডাক্তার পলাশ উল্লেখ করেন, ‘তিনি ১৪ দিন পর আবার ফোন করলেন। ভাগ্যক্রমে, আমিই ফোন কলটি রিসিভ করেছিলাম। তার পরিচয় পেয়ে, আমি তাকে বললাম যে আমি তাকে আগের চিকিৎসা দিয়েছি। রোগি জানালেন, তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’

এটুআই এর’টেলিমেডিসিন সেবা’র জাতীয় পরামর্শক হয়ে কাজ করছেন দিদার-ই-কিবরিয়া।

তিনি জানালেন, যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিল, অর্থাৎ গত বছর এপ্রিলে দেশব্যাপী লকডাউন ছিল, সেই সময় কেউ এই নতুন মহামারী মোকাবেলা করতে প্রস্তুত ছিল না। তখন থেকে, বিএমডিসিতে নিবন্ধিত প্রায় ৪৫০০ ডাক্তার অবসর সময়ে ফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়ার কাজটি করে যাচ্ছেন। এজন্য যোগ্য চিকিৎসকদেরকে অবশ্য এটুআই, মুক্তপাঠ এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবা দ্বারা বিকশিত জাতীয় ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোভিট-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স সম্পন্ন করতে হয়েছে।
এসএ/