ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতি করছে চীনের বিআরআই প্রকল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৭ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২১ রবিবার

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় আরো টেকসই প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরির সুযোগ করে দিতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের সূচনা করে চীন। কিন্তু এ প্রকল্পের ফলে অর্থনৈতিক, আইনি এবং সার্বভৌমত্বের মতো সমস্যা ছাড়াও ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস)।

ইএফএসএএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক পরিবেশগত প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। ২০১৩ সালে বেইজিং থেকে ঘোষিত বিআরআই এই প্রবনতাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। 

দক্ষিণ এশিয়াসহ পুরো বিশ্বময় কাঠামোগত অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে চীন নিজেদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভুমিকা আরো সমুন্বত এবং সম্প্রসারিত করতে চাইছে। কিন্তু এনভায়রনমেন্টাল কুজনেটস কার্ভের (ইকেসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবেশগত প্রবণতা সাধারণত উন্নয়নের গতিপথের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শিল্পায়ন বেড়ে যাওয়ার কারণে দূষণ বাড়ছে; যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান পরিবেশগত বৈশিষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যাপকহারে শিল্পায়নের ফলাফল হিসেবেই দূষণ বাড়ছে বলে ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে জানায় এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট। 

ইএফএসএএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহুরে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ দেখা যায়। এ অঞ্চলের ৯১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের বাসস্থানের দূষণের হার ৩৫এমজি/এমথ্রি। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বলে অভিহিত করা হচ্ছে।  

বিআরআই প্রকল্পগুলোয় উন্নয়ন হিসেবে শিল্প প্রবৃদ্ধিকে অন্যতম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; ফলে এখানে পরিবেশের অবনতি আরো তীব্র হয়ে উঠবে। চীনে পরিবহন ও জ্বালানী নেটওয়ার্ক গঠনের জন্য ব্যাপকহারে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে; যা দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভিত্তিগত ভুমিকা রেখেছে।  

দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এই অবকাঠামো চালিত প্রবৃদ্ধির মডেল সরবরাহ করছে চীন। ইএফএসএএস বলছে, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে এবং জ্বালানী ব্যবহারে নবায়নযোগ্য ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব না দেয়া হলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বড় ধরনের পরিবেশগত ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। 

উদাহারণ হিসেবে পাকিস্তানের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। ‘চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর’ অথবা সিপিইসি গিলগিট-বাল্টিস্তান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া ছাড়াও নানারকম পরিবেশগত ঝক্কি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বহন করছে। সিপিইসির কারণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ঝুঁকি হচ্ছে রাস্তার নেটওয়ার্ক নির্মাণের জন্য ব্যাপকহারে বন উজার করা।

সিপিইসির কারণে সৃষ্ট আরেকটি সমস্যা হলো যানবাহন চলাচল। কারাকুরাম হাইওয়ের মতো রোড নেটওয়ার্কে দৈনিক সাত হাজার ট্রাক চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই ট্রাকগুলো থেকে দৈনিক ৩৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে; যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিআরআই এর মাধ্যমে সৃষ্ট স্বল্প মেয়াদের অর্থনৈতিক সুবিধা এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশগত ঝুঁকির মতো বিষয়ের একটি বেছে নেয়ার পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। সূত্র: এএনআই

এসি