যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে সন্ত্রাসবাদের প্রসার ঘটাতে পারে তালেবান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২১ সোমবার
মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগ প্রায় সম্পন্ন। যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা যাওয়া অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম হাতে পেয়েছে তালেবান। আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তালেবানের হাতে যাওয়া এসব অস্ত্র নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থানে সহায়তা করবে।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্ঞানেশ কামাত এশিয়া টাইমসে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সৈন্যদের ফেলা যাওয়া এসব অস্ত্র তালেবানকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত করবে। তিনি বলেন, তালেবান আফগানিস্তানের মসনদ দখল করায় সাধারণ আফগান তো বটেই, প্রতিবেশি দেশগুলোও সন্ত্রাসবাদের মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।
তালেবানের হাতে যাওয়া অস্ত্রের পরিমাণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই গোষ্ঠীটির হাতে কমপক্ষে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র গেছে। যার মধ্যে- অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, যুদ্ধযান, সামরিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন, এবং সামরিক হেলিকপ্টর রয়েছে। এর বাইরেও আফগান পুলিশের মধ্যে বিতরণ করা প্রায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্রও তালেবান হস্তগত করেছে বলে এশিয়া টাইমসের ওই লেখায় উল্লেখ করেছেন এই বিশ্লেষক।
কামাত জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার এবং ব্রাজিলের তৈরি স্থলভাগে আক্রমণ করার বিমান এএন-২৯ এর সামনে অবস্থান করছে। এ ছাড়া, আশরাফ গনি সরকারের কাছে থাকা রাশিয়ার অত্যাধুনিক এমআই-১ হেলিকপ্টারের দখলও তালেবান নিয়ে নিয়েছে।
তবে বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র চালানো বা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে তালেবানের সেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে এসব সরঞ্জাম তালেবানের মতাদর্শগত বিদেশি জিহাদিদের হাতে পড়তে পারে। অথবা তালেবান আন্তর্জাতিক কালোবাজারে জিহাদি সংগঠনের কাছে অতিরিক্ত কিছু সামগ্রী বিক্রিও করতে পারে। যা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের পথকে সুগম করবে বলে সতর্ক করেছেন এই বিশ্লেষক।
এর উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, কাবুল দখলের পর তালেবানের তথাকথিত বিজয়ে ‘লাভ জিহাদ' পন্থীদের উদযাপন ছিলো চোখে পড়ার মতো। শুধু তাই নয়, সিরিয়ার হায়াত তাহরির আল-শামের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তালেবানের বিজয়কে অনুকরণযোগ্য উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অসংখ্য জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা তালবানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধি ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, যা পাকিস্তানি তালিবান নামেও পরিচিত, ইতিমধ্যেই তারা আফগান তালেবানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়েছে।
জ্ঞানেশ কামাত জানান, তালেবান এবং আল-কায়েদার মধ্যে এখন শুধু মতাদর্শগত মিলই নয় বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারাও তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এ ছাড়া, আফগানিস্তানে আইএসআইএস-এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দেশে থেকে আসা অন্তত ১০ হাজার সন্ত্রাসী রয়েছে, যাদের পৃষ্ঠপোশকতা করছে তালেবান।
গত বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গেটে যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তার পেছেনে ইসলামিক স্টেট-খোরাসান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতারা জড়িত বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, এ ধরনের আরও একাধিক হামলার হুমকি রয়েছে।
বাইডেন অভিযোগ করেন, কাবুল দখলের পর হামলা চালানো এই ‘ইসলামিক স্টেট-খোরাসান’ সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেয় তালেবান। তার মানে এটা স্পষ্ট যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করছে তালেবান। অদূর ভবিষ্যতে যা আফগানিস্তান তো বটেই তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও মারত্মক হুমকি তৈরি করবে। সূত্র : এএনআই
এসি